‘ধান ভাঙ্গা এই আঙিনাতে জেগেছে চাঁদ/কিষাণের ঘরে আজ ভেঙেছে বাঁধ, নবান্নের এই গানে কাটুক সারা বেলা, নতুন ধানের গন্ধে অঙ্গে লাগুক দোলা’ গানের সুরে সমবেতরা যখন নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন, তখন তিন কৃষককে নিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিরা উৎসবের উদ্বোধন করেন।
এ সমসয় বেলুন উড়িয়ে বেজে চলেছে নবান্ন সঙ্গীত। নবান্ন সঙ্গীতে চলে বর্ণিল নবান্ন উৎসব।
সোমবার নগরের ডিসি হিল প্রাঙ্গনে শিশুমেলার উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত হয় ‘নবান্ন উৎসব’। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা থেকে আসা নেজাম উদ্দিন, নিতাই দাশ ও মো. সেলিম নামের তিন কৃষককে নিয়ে অতিথিরা উৎসবের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফি, বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ রীতা দত্ত, নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, সঙ্গীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ, সদস্য সচিব রুবেল দাশ প্রিন্স, পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান।
উদ্বোধনের পর ভায়োলেনিস্ট’স টিচাগাং এর শিল্পীরা বেহালা বাজিয়ে শুরু করে উৎসবের অনুষ্ঠান। তারপর নিষ্পাপ অটিজম স্কুলের বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা পরিবেশন করে নাচ। এর পর শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে পরিবেশনায় অংশ নেয় তোরসা এবং কামাল, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, নৃত্যম একাডেমি। সাত দশকের সবচেয়ে বড় চাঁদ যখন ডিসি হিলের আকাশে উঁকি দিচ্ছে তখন মঞ্চ আলোকিত করে দর্শক মাতালেন ইলমা বিনতে বখতেয়ার, পূর্ণ চন্দ্র রায়, গীতা আচার্য্য, জনি বড়ুয়া।
প্রধান অতিথি বেগম মুশতারী শফি বলেন, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে তেমনভাবে কোনো উৎসব এখন আর পালিত হয় না। অনেক লড়াই অনেক সংগামের এ দেশ জন্মের পর থেকেই গত ৪৫ বছরে একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে চলেছে। নবান্ন বাঙালির প্রাণের উৎসব, এ উৎসব যেন থেমে না যায়। যত বেশি করে পহেলা বৈশাল, নবান্ন, পৌষ, বর্ষা আর বসন্ত উৎসব হবে তত বেশি বাঙালি সংস্কৃতি লালিত হবে। যত উৎসব করব তত অপশক্তি দূর হবে।
সভাপতির বক্তব্যে একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিশু কিশোররা আজ ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। গ্রামে হাটেমাঠে ঘরে নবান্ন উৎসব হয়। এই সময়ে ফসল ওঠে। ঘরে ঘরে আনন্দ-পালাগান, যাত্রা গান হয়। সারাদিন আনন্দে থাকে মানুষ। আমাদের আনন্দের জের সন্ত্রাসবাদী জঙ্গির থাবায় মলিন হতে বসেছে। এই হায়েনাদের পরাজিত করবে। এরকম উৎসব থেকেই আমাদের শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। উৎসব আয়োজনই পারে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে।
অধ্যক্ষ রীতা দত্ত বলেন, এখন শিশুরা বাঙালি ঐতিহ্য নয় পাশ্চাত্য ভাবধারার অনুকরণ করছে। শিশুরা এখন মাছ পাখি ফুল গ্রাম চেনে না। বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে তবে বাঙলা সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে নয়। নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করে মাটির কাছাকাছি থেকে মেধা মননে এগিয়ে যেতে হবে।
কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, আমাদের শিশুরা টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল লিটল স্টারের ভিড়ে আদর্শলিপির মানবতাবোধ হারিয়ে ফেলছে। আমরা চাইছি সন্তানরা শুধু বড় হোক। গুলশানের হামলাকারীরা সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। নিজেদের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন সমাজ গড়তে হবে। আসুন সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করি।