পিতার আদর ভালোবাসা বঞ্চিত ২৭ বছর বয়সী রাজিব মুন্সি ছিলেন উদার মনের মানুষ। বিবাহ বিচ্ছেদের পর মা কোহিনুর আক্তার পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি জেলার বরুড়া উপজেলার খোশবাস গ্রামে নিয়ে আসেন। ফলে মামার বাড়িতেই বড় হন তিনি।
রাজিব কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাঁও গ্রামের মো. ইউনুস মুন্সির ছেলে। রবিবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে মায়ের সাথে কথা হয়। এরপর রাত ১টায় খরব আসে মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় রাজিব মারা গেছেন। মৃত্যুর খবরের সাথে নেমে আসে শোকের ছায়া।
নিহত রাজিবের মামাতো ভাই জাহিদ হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি ২৬ দিন হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে এসেছি। ১০ মাস পূর্বে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ঋণ করে বহু কষ্টের বিনিময়ে রাজিব মালেশিয়া যায়। তার বাবা আমার ফুপুকে ছেড়ে দেওয়ার পর রাজিব আমাদের বাড়িতে বড় হয়েছে। ফুপু ছেলের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেননি। তার বাবা কখনও খোঁজ খবর নেয়নি। ২২ বছর ধরে ফুপুর কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে ধার দেনা করে ভাইটিকে মালয়েশিয়া নিয়েছি। তারপর আমি বাড়িতে এসেছি। এই ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবো জানি না। রাজিব দেশে কৃষি কাজ করেছে, ভালোই ছিল।
অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আরেক প্রবাসী মোহাম্মদ মহিন উদ্দিন। তিনি কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে। বাহারাইন থেকে চলে আসার পর মহিন উদ্দিন গত ৭ মাস পূর্বে মালয়েশিয়ায় যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে স্ত্রী, মা-বাবা এবং এক বছরের শিশুর সাথে কথা শেষ করে কাজে রওনা দেয় মহিন।
চাচা জামাল উদ্দিন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তার বাবা তাজুল ইসলাম কৃষি কাজ করে পরিবার চালান। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান মহিন। এক বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে তার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে মালয়েশিয়ায় যান মহিন। রবিবার দিবাগত রাতে খবর আসে মহিন মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তারপর থেকে তার পরিবারেও নেমে আসে শোকের ছায়া।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার সেপাং শহরে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে পাঁচ বাংলাদেশিসহ ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। এদের মধ্যে দুইজন কুমিল্লার। তারা হলেন- জেলার লালমাই উপজেলার দুর্লভবপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মহিন (৩৭), দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাঁও গ্রামের মো. ইউনুস মুন্সির ছেলে মো. রাজিব মুন্সি (২৭)।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম