রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২-এর বিচারক দেবাংসু কুমার সরকারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী ডা. রিদিতা সরকার বাদী হয়ে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২ এর বিচারক রোকনুজ্জামানের আদালতে মামলা করেছেন। যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে এই মামলা করা হয়েছে। বিচারক মামলাটি শুনানির জন্য আগামী ২১ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
ডা. হৃদিতা সরকারের আদালতে দাখিল করা লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, তিনি রংপুর মেডিকেল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। হিন্দু আইন অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১১ মে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামী ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তারপরেও তার বাবা আমাদের ভবিষ্যৎ সুখের কথা ভেবে ৫০ ভরি সোনার অলংকারসহ ২৫ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী প্রদান করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতেই পুনরায় একটি নতুন গাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে তার স্বামী রংপুর জজশীপে বদলী হয়ে আসেন।
এখানে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বাসা ভাড়ার নিয়ে বসবাস করাকালে মাদকাসক্তির বিষয়টি তার নজরে আসে। গত বছরের ২৮ মে পুনরায় ৩০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে বাসা থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করলে স্টাফ কোয়ার্টারে অবস্থানরত অন্যান্য কর্মকর্তারা এসে রক্ষা করেন। তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। এরই মধ্যে জানতে পারেন আসামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে বাদী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সচিব আইন মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করে বিচার দাবি করে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়।
উপায়ন্তর না দেখে রংপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় ঘোরাফেরা করে তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। গত ৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাদী ও তার স্বজন এবং স্বাক্ষীরাসহ আসামী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেবাংসু কুমার সরকারের সাথে দেখা করার জন্য এলে তার চুলের মুঠি ধরে এলোপাথাড়ি মারধর করে বাম কান, নাক ও মুখে ঘুষি মারে। এতে তার নাক মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হতে থাকে। দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ২১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়ে ১৭ এপ্রিল রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা গ্রহণ না করে আদালতে মামলা করতে বলেন। মামলায় স্বামী দেবাংসু কুমার সরকারসহ শ্বশুর শুধাংশ কুমার সরকার, নিরয় দে সরকার ও রঞ্জন সরকারকে আসামি করা হয়।
এদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক হাসনাইন জানান, বাদী রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২ এর বিচারক রোকনুজ্জামানের আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করেছেন। বিচারক শুনানি শেষে আগামী ২১ এপ্রিল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলে তারিখ ঘোষণা করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর