বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে গতকাল শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, শোভাযাত্রা, সংগীত, আবৃত্তি, নাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শিল্পকলা একাডেমি : নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিল্পকলা একাডেমির স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘লাল জমিন’ : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘লাল জমিন’ মঞ্চায়নের মাধ্যমে শেষ হলো জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিনব্যাপী স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কর্মসূচি। মান্নান হীরার রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গতকাল সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এক নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্যরূপ ‘লাল জমিন’। ৭০ মিনিটের নাটকে একক অভিনয়ের মাধ্যমে মোমেনা চৌধুরী দর্শকদের বিমোহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে একজন কিশোরীর অংশগ্রহণ, গল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ভয়াবহতা, মেয়েটির ত্যাগÑ সবশেষে স্বাধীনতা অর্জন দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় ‘লাল জমিন’।  নাটকের শুরুতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই ঘোষণার মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই নাটকে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য মোমেনা চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান। এরপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অভিনয় শিল্পীর হাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ক্রেস্ট তুলে দেন।

এর আগে গতকাল দুপুরে প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ক্লাব ভবনে আলোকসজ্জা এবং দুপুরে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়।

এসএসসি প্রজন্ম ২০০১ বাংলাদেশ :  স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এ প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রায় ২০০ শিশুর মধ্যে ছিল হাসিমুখ স্কুলের ১৫০ পথশিশু। ৩টি বিভাগে বিভক্ত এই প্রতিযোগিতায় শিশুরা আঁকে জাতীয় পতাকা, স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি।

২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘এসএসসি প্রজন্ম ২০০১ বাংলাদেশ’ এর সদস্যদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি শিশুকে আর্টবোর্ড, রং পেনসিলসহ চিত্রাঙ্কনের সরঞ্জাম উপহার দেওয়া হয়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে গতকাল নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শেষ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তিন দিনের এ সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অশুভের সাথে আপসবিহীন দ্বন্দ্ব চাই’। সমাপনী দিনে শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সংগীত একাডেমি, ভিন্নধারা, দৃষ্টি, সুরতাল। রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চের পর্বে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী, আনন্দন ও নন্দন।

জাতীয় জাদুঘর : মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উযাপন করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। এতে প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ ও ‘পিতা’। মুক্তিযুদ্ধের এ আলোকচ্চিত্র প্রদর্শনী চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত।

বাংলা একাডেমি : জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বিকালে একাডেমির রবীন্দ্রচত্বরে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের এ আয়োজন। এতে সংগীত পরিবেশন করেন বুলবুল মহলানবীশ, বদরুন্নেসা ডালিয়া এবং বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি।

চ্যানেল আই : স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চ্যানেল আইতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক-চ্যানেল আই ১০ম ‘রং তুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’। সকালে চ্যানেল আই প্রাঙ্গনের এ আয়োজনে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত। অর্থমূল্য তুলে দেন চ্যানেল আইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চ্যানেল আই পরিচালনা পর্ষদ সদস্য জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, মুকিত মজুমদার বাবু, আবুল বারাক আলভী, বীরেন শোম, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, হাসনাত আবদুল হাই, মামুনুর রশীদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত চিত্রশিল্পী আঁকেন মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্যপূণ্য চিত্র। তাদের পাশাপাশি শিশুরাও চিত্র এঁকেছে। এ সময় আবদুল মান্নান ও জহিরের অঙ্কনকৃত দুটি ছবি ক্রয় করেন ছবি সংগ্রাহক সারোয়াত। দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর