রবিবার, ১৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ভার্চুয়াল আদালতে আগ্রহ আইনজীবীদের

প্রথম চার দিনে ৬০৪৮টি আবেদন

আরাফাত মুন্না

করোনাভাইরাসে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণকে সংক্রমণমুক্ত রেখে বিচার পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার পর এ কোর্ট নিয়ে আইনজীবীদের আগ্রহ বাড়ছে। শুরুতে নানা সংশয় নিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও এখন অনেকেই ভার্চুয়াল আদালতে মোয়াক্কেলের জামিন চেয়ে আবেদন করছেন। দেশে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা সচল হওয়ার পর গত চার দিনে দেশের আদালতগুলোতে ছয় হাজার ৪৮টি জামিন আবেদন দাখিল হয়েছে। একই সময়ে জামিন পেয়েছেন দুই হাজার ৯৭৯ জন আসামি। এ ছাড়া প্রচলিত আদালতের চেয়ে অনেক দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিন আদেশের কপিও পৌঁছে যাচ্ছে কারাগারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভার্চুয়াল কোর্টে জামিন আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ায় কারাগারগুলোতে চাপ কমবে। অন্যদিকে ভার্চুয়াল হাই কোর্টে জামিন আবেদনের পাশাপাশি রিট ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি গ্রহণে চারটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া গঠন করা হয়েছে আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল চেম্বার জজ আদালতও। ভার্চুয়াল হাই কোর্ট ১২ মে চট্টগ্রামের হালদা নদীদে ডলফিন হত্যা বন্ধে প্রথম আদেশ দেয়। চার দিনে হাই কোর্টের পৃথক চার বেঞ্চে জামিন ও রিট মিলিয়ে ৩১৮টি আবেদন দাখিল হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানায়। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ১১ মে থেকে আইনজীবীরা ই-মেইলের মাধ্যমে অধস্তন আদালতগুলোতে জামিনের দরখাস্ত দাখিল করছেন। আটটি বিভাগের জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত চার দিনে ছয় হাজার ৪৮টি জামিনের আবেদন দাখিল করেছেন আইনজীবীরা। দাখিলকৃত আবেদনের মধ্যে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরির মামলাসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের মামলা রয়েছে। এসব আবেদনের মধ্যে তিন হাজার ৭৭০টি জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে দুই হাজার ৭৩৬টি আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারকরা। এসব আবেদন মঞ্জুরের বিপরীতে জামিনপ্রাপ্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৭৮ জন আসামি। জামিনপ্রাপ্তদের অধিকাংশই কারামুক্তি পেয়েছেন। যারা পাননি তাদের মুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। গত চার দিনের মধ্যে ১১ মে নিম্ন আদালতে প্রথম জামিন আবেদন দাখিল ও মঞ্জুর হয় কুমিল্লায়। একটি মারামারীর মামলায় দেশের ভার্চুয়াল আদালতের ইতিহাসে প্রথম জামিন পান সারোয়ার নামে এক ব্যক্তি। এরপর ১২ মে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৪৪ জন, ১৩ মে এক হাজার ১৩ জন এবং ১৪ মে এক হাজার ৮২১ জন জামিন পেয়েছেন ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে।

জানতে চাইলে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ঢাকা ল রিপোর্টের (ডিএলআর) সম্পাদক অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, জামিন চাওয়া একজন ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। কিন্তু জামিন হবে কি হবে না সেটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। করোনাকালে আদালত থেকে বিপুলসংখ্যক আসামি জামিন পাচ্ছেন এটা ভালো লক্ষণ। কারণ এ সময়ে মানুষ তো বিচার পাচ্ছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ার পর সরকার কারাগারে চাপ কমাতে কয়েক হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। এখন আদালত কর্তৃক জামিনের মাধ্যমে কয়েক হাজার আসামি মুক্তি পেল এবং আগামীতে পাবে। এতে বন্দী রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কারাগারের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর