রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
বাজেটপূর্ব ওয়েবিনার

স্বাস্থ্য খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন বরাদ্দ বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয় জিডিপির ২.৩৪ শতাংশ এবং মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় মাত্র ১১০ ডলার। এক দশক ধরেই স্বাস্থ্যে সরকারি ব্যয় সর্বমোট সরকারি ব্যয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ শতাংশ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্য মেয়াদে ১০-১২ শতাংশে উন্নীত করা উচিত। পাশাপাশি মহামারী পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক বাজেটের পরিকল্পনা করাটা জরুরি, যাতে এক বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনা যায়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের যৌথ আয়োজনে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে দেশের স্বাস্থ্য খাতের নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা এমন অভিমত তুলে ধরেন। গতকাল অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সঞ্চালক ছিলেন ড. আহম্মদ মুশতাক রাজা চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ওয়েবিনারে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশে এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবায় কোনো বরাদ্দ নেই। সব মেডিকেল কলেজে হৃদরোগ, ক্যান্সার ও কিডনি রোগ চিকিৎসায় কোনো বরাদ্দ নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনসহ সুবিধাদি আধুনিকীকরণেও কোনো বরাদ্দ নেই। চরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। আর নগরে বস্তিবাসী চিকিৎসাসেবা নেওয়ায় পিছিয়ে আছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ অনেক কম। এটা বাড়ানো উচিত। খরচের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাডার, সুপার ক্যাডারের কী প্রয়োজন তা আমি জানি না।’ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে পারে না। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। অর্থছাড়ে অনেক সময় লাগে। এসব সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।’ স্বাস্থ্য খাতে ব্যবস্থাগত সংস্কার এনে চিকিৎসকের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রস্তাব দেন তিনি। সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘ভারত থেকে পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক আসছে সেগুলোর চালক ও সহকারীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এরা করোনা ছড়াবে। এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’ সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘করোনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখনই স্বাস্থ্য খাতে নজর দিতে হবে। দেশে ১ লাখ চিকিৎসক দরকার। সেখানে আছে মাত্র ৩০ হাজার।’ সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এর পরিবর্তন দরকার। কমিউনিটি ক্লিনিকে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সবাই যেন স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, জনবল বাড়াতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রীর ওপর কর কমাতে হবে।’ জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন বলেন, ‘বাজেটে কত টাকা পেলাম তা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কাজ করতে হবে। এখন কেন জানি সবাই বরাদ্দ, টাকার দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্তরের দশকে আমরা সারা দেশে কাজ করেছি। তাহলে এখন কেন নয়?’ ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘করোনার জন্য চলতি অর্থবছরে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। আগামী অর্থবছরে ভ্যাকসিনের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিতে হবে।’ মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালগুলোয় মাথাপিছু বরাদ্দের সুষম বণ্টন হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বরাদ্দ বিশ্লেষণেও অসমতা রয়েছে। ওয়েবিনারে স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ দেওয়া হয়। বলা হয়, আশপাশের দেশের মতো যেন করোনা বিপর্যয়ে না পড়তে হয় সেজন্য সরকারি-বেসরকারি সব অংশীজনের সমন্বয়ে ‘যুদ্ধ প্রস্তুতি’ নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর