রবিবার, ৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

তুচ্ছ ঘটনায় মারধর অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা জড়াচ্ছে হামলা, অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণের মতো বড় অপরাধে। এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে আতঙ্কিত সিলেটের মানুষ। প্রকাশ্যে সংঘটিত অপরাধের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে অনেকটা জিম্মি পাড়া-মহল্লার মানুষ। পুলিশ বলছে, এসব কিশোর অপরাধী ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার রয়েছে। কোথাও কোনো অপরাধের খবর পেলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সিলেট নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় কিশোর গ্যাং।  জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও রয়েছে এমন গ্যাং। কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে একাধিক গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রায়ই তারা জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে। এক গ্রুপের সদস্যকে অন্য গ্রুপের সদস্যরা তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনা নিত্যদিনের। বুধবার নগরভবনে হামলা চালায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। ওই হামলায় অংশ নেয় শতাধিক কিশোর। নগরভবন লক্ষ্য করে তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। সিটি করপোরেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এ দৃশ্য ধরা পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিকশাচালকদের পক্ষ নিয়ে হামলার জন্য একটি মহল কয়েকটি কিশোর গ্যাং ভাড়া করে। এর আগে গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় দক্ষিণ সুরমার নভাগ গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে তৌফিকুল ইসলাম তামিমকে বাড়ি থেকে ডেকে বের করে দুই কিশোর। বাড়ির রাস্তায় বের হওয়ার পর আরও ৬ কিশোর ঘিরে ধরে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় তামিমের শোরচিৎকার শুনে তার মা-বাবা ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আট কিশোরকে আটক করেন। তাদের ছাড়িয়ে নিতে আরও ৮ কিশোর এগিয়ে এলে তাদেরও আটক করে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই ১৬ কিশোরকে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাড়ে ১১টায় স্বজনদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ফুটবল খেলা নিয়ে তামিমকে অপহরণ করতে গিয়েছিল ওই ১৬ কিশোর। পরে সংশোধনের জন্য অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গত ২৭ মে রাতে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক কিশোরী মোহন স্কুলের সামনে থেকে দুই কিশোরকে অপহরণ করে কিশোর গ্যাংয়ের ১০-১২ সদস্য। পূর্ব জিন্দাবাজার আসার পর স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে অন্যরা পালিয়ে গেলে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, কয়েক দিন আগে অপহৃত কিশোররা অন্য একটি গ্রুপের এক কিশোরের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এর জের ধরে ওই গ্রুপের কিশোররা আজ তাদের পেয়ে অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছিল। 

এ রকম কিশোর গ্যাং নগরীর আম্বরখানা, বড়বাজার, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, কাজিটুলা, কুমারপাড়া, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নয়াসড়ক, মিরাবাজার, ভাতালিয়া, লামাবাজার, মেডিকেল রোডসহ বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কয়েক দিন আগে নগরীর আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায় একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপর গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। পরদিন পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় এক কিশোর ও তার বাবাকে বেধড়ক মারধর করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, কিশোর অপরাধ রুখতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। বিশেষ করে অভিভাবক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে- এ ব্যাপারে খোঁজ নিলে তারা অপরাধে জড়াতে পারবে না।

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান জানান, কোথাও কোনো কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীর খবর পেলে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যেও পুলিশ কাজ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর