বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত রাষ্ট্রপতির

প্রতিদিন ডেস্ক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জনগণের জন্য স্বাধীন স্বদেশভূমি এবং একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার উপলব্ধি করে বাংলাদেশের অদম্য অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গতকাল কাজাখস্তানের রাজধানী নুর সুলতানে দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি এ মত ব্যক্ত করেন। খবর বাসস। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যখন বিশ্ব এক ভয়াবহ মহামারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এর ফলে জীবন ও জীবিকার অভূতপূর্ব ক্ষতি হচ্ছে, এ অবস্থার মধ্যে ফিলিস্তিনের ভাই-বোনেরা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে আমাদের কাছ থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ আশা করছে।’ এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশ, ওআইসি ও বিশ্বের জন্য নিরন্তর উদ্বেগের বিষয় বলে অভিহিত করেন।

রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ‘আপনারা সবাই জানেন যে, সিএফএম সম্পর্কিত প্রস্তাব অনুযায়ী ওআইসি গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমার সরকারকে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, যার মাধ্যমে আদালত সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্থায়ী ব্যবস্থা জারি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ওআইসি মহাসচিব ২০২০ সালের জুলাইয়ে একটি যৌথ চিঠি জারি করে সব সদস্য রাষ্ট্রকে এ মামলার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় আইনি ব্যয় বহনের জন্য স্বেচ্ছাসেবক তহবিলে অবদান রাখার আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা সম্প্রদায় যাতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে তিনি ওআইসির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণা, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, খাদ্য ও কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ব্লু ইকোনমি এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে অভিজাত পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ করেছে। প্রযুক্তি পরিবর্তনের অনন্য উদ্ভাবন ও অভিযোজন যোগ্যতার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের এক গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আমাদের এ পথে বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিকাশমান ওষুধশিল্প এবং অল্টারনেটিভ মেডিসিন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, এ ছাড়া বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার মেডিসিন, ন্যানো প্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ, আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি, জিন ব্যাংকিং এবং ব্লু ইকোনমি সম্পদ খাতকে উৎসাহিত করেছে। ওআইসি সদস্য দেশের বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা এ ক্ষেত্রগুলোয়ও তাদের দক্ষতা এবং জ্ঞান বিনিময় করতে পারেন। তিনি দ্বিপক্ষীয় তথা সম্মিলিত ভিত্তিতে নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলোয় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অংশীদারি, অভিন্ন প্ল্যাটফরম গঠন ও কৌশল প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকের একই রকম শক্তি ও সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা একে অন্যের পরিপূরক হতে পারি, আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে এবং টেকসই উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে গেম চেঞ্জার হিসেবে ব্যবহার হরতে পারি।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭৪ সাল লাহোরে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ ওআইসির সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক উপভোগ করছে।

মুসলমানরা একসময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ, বিজ্ঞান গবেষণায় বিনিয়োগ এবং নতুন পথের অনুসন্ধান, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগমনে জীবনের সব ক্ষেত্রে উদ্ভাবনায় সমন্বিত ও নিবেদিত গবেষণা ও উন্নয়নে জড়িত থাকার ওপর জোর দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর