খুলনায় করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বখাটে কিশোর-যুবকরা গ্রুপ তৈরি করে মাদক সেবন, ছিনতাই ও খুনের মতো অপরাধে যুক্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া রূপসা সেতু, ৭ নম্বর ঘাট, ভৈরব নদীর তীরসহ বিনোদন এলাকাগুলো কেন্দ্র করে তাদের অপতৎপরতা মাত্রা ছাড়িয়েছে। এসব স্থানে ঘুরতে আসা কিশোরী-তরুণীদের টার্গেট করে নাজেহাল ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। জানা যায়, রূপসা সেতুর দুই পাশে, সেতুর ওপরে, টোল ঘরের আশপাশে ও নদীর তীরে একাধিক কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে। এসব স্থানে তারা দল বেঁধে আড্ডা, কখনো মোটরবাইকের রেস খেলে বা উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে ক্ষমতার জানান দিচ্ছে। সেই সঙ্গে এখানে ঘুরতে আসা মেয়েদের ওড়না টেনে ধরা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনার জেরে ৭ নম্বর ঘাট এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপসা ব্রিজ থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত পাঁচজন ‘বড়ভাই’ কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে। এদের সবার নামে খুলনার বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাই চাঁদাবাজি মামলা রয়েছে।
এ গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা তিন শর কাছাকাছি। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে এখানে চানমারী বাজার এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় মো. আল ফায়েদ (১৭) নামের নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র নিহত হলে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি আলোচনায় আসে। একই সময় তার সঙ্গে থাকা স্কুলছাত্র শুভর (১৮) দুই পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে ৩ জুন সিনিয়র-জুনিয়র দ্ব›েদ্বর জের ধরে আলামিন নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, নগরীর বানরগাতি, নিরালা, প্রান্তিকা আবাসিক ও কাশেমনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছে লেলিন গ্রুপ। টুটপাড়া, মহিরবাড়ি খালপাড় এলাকায় রয়েছে নূর আজিম ও আবদুল্লাহ গ্রুপ। তাদের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, অভিভাবকরা সন্তানের প্রতি নজর না রাখায় কিশোররা এখন ছোট অপরাধ থেকে বড় সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এদিকে মাদক বেচাকেনা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও খুনের মতো ঘটনার তদন্তে কিশোর অপরাধীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।
এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান জানান, ‘সাধারণত কোনো ধরনের অপরাধের তথ্য পেলেই সেটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাছাড়া অপরাধ দমনে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।’