বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

‘লাইন খরচের নামে মাসে আদায় অর্ধশত কোটি টাকা

চাঁদাবাজি হয় ৫০০ স্পটে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর ৫ শতাধিক স্পটে চলছে ‘লাইন খরচ’র নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। নগরীতে চলাচলরত প্রায় ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। যার সিংহভাগই চলে যায় স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক এবং পরিবহন নেতাদের পকেটে। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ থাকায় স্পটে স্পটে চাঁদা আদায়কারী লাইনম্যানরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কান্তি নাথ বলেন, ‘সড়কে লাইন খরচের নামে অর্থ আদায়কে কোনোভাবেই সমর্থন করে না সিএমপি। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরই মধ্যে চাঁদাবাজি করার সময় কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও হয়েছে। এ ধরনের চাঁদাবাজিতে পুলিশের কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বহদ্দারহাট এলাকার এক লাইনম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতি ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে দশ টাকা করে লাইন খরচ আদায় করা হয়। কিন্তু টাকার ভাগ নিয়ে যায় চান্দগাঁও থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ এবং স্থানীয়  ছেলেরা। দিন শেষে লাইনম্যানের ভাগে হাজার টাকাও পড়ে না। কিন্তু চালকদের গালি ও বদনামি শুনতে হয় লাইনম্যানদের।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীতে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে কথিত লাইন খরচের নামে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। নগরীর কমপক্ষে ৫ শতাধিক স্পটে নেওয়া হয় চাঁদা। প্রতি ভাড়ায় ১০ টাকা করে নেওয়া হয় সিএনজি অটোরিকশা থেকে।

প্রায় ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা থেকে এসব স্পটে প্রতিদিন আদায় করা হয় কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা। মাস শেষে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকা। যার সিংহভাগ অর্থ চলে যায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, পরিবহন শ্রমিক নেতাদের পকেটে। আর কিছু টাকা পায় চাঁদা উঠানো ও গাড়ির সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়োজিত কথিত লাইনম্যানরা। নগরীতে লাইন খরচের নামে চাঁদা আদায় করা হয় এমন স্পটের মধ্যে নতুন পাড়া বিআরটিসি ডিপো, অক্সিজেন মোড়, বায়েজিদ মোড়, শেরশাহ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, আতুরার ডিপো, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট মোড়, নতুন রাস্তার মাথা, কালুরঘাট এলাকা, এক কিলোমিটার এলাকা, আন্দরকিল্লাহ, জিইসি, ওয়াসা, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, টাইগারপাস, নিউমার্কেট, আগ্রাবাদ মোড়, বাদামতলী, একে খান গেট, আকবর শাহ, কর্নেলহাট, নয়াবাজার, ওয়াপদা গেট, ফকিরহাট, নিমতলা ব্রিজ, সল্টগোলা, ইপিজেড, বন্দর টিলা, সিমেন্ট ক্রসিং, স্টিল মিল বাজার, কাটগড় রিফাইনারি গেট, বড়পোল, ছোটপুল অন্যতম।

আবুল খায়ের নামে এক সিএনজিচালক জানান, ‘লাইন খরচের নামে নগরীর কয়েকশ স্পটে চাঁদাবাজি চলছে প্রকাশ্যে। প্রতি ভাড়ার জন্য একেকটি স্পটে দিতে হয় ১০ টাকা। এভাবে একজন সিএনজি চালকের প্রতিদিন লাইন খরচ বাবদ দিতে হয় কমপক্ষে ১৫০ টাকা। অতিরিক্ত খরচের টাকা যাত্রীদের কাছ থেকেই নিতে বাধ্য হই।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক সিএনজিচালক বলেন, ‘নগরীর প্রত্যেক সিএনজি অটোরিকশা স্টপে লাইন খরচের নামে টাকা তোলা হয়। লাইন খরচের টাকা দিতে না চাইলে লাইনম্যানরা চালকদের মারধর করে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর