স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা গোটা সিলেট জেলাকে ল- ভ- করে দিয়েছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠেছে বন্যার ক্ষত। আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে মানুষ বাড়ি ফিরে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কারও ঘর, বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা বাড়ি। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী বন্যায় সিলেটে প্রায় ৪০ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হবে বলে মনে করছে সচেতন মহল। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেলার অন্তত ২০ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিলেটে শতবর্ষী প্রবীণরাও বলছেন, তাদের জীবদ্দশায় এবারের মতো ভয়াবহ বন্যা দেখেননি। ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যাকে সিলেটের ইতিহাসের বড় বন্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু এবারের বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব ইতিহাস। এর আগে গোটা জেলাজুড়ে এমন ভয়াবহ বন্যা হয়নি বলে স্বীকার করছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিলেটের সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি, গোয়াইন, লোভা নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলো থেকে বন্যার পানি প্রায় নেমে গেছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলো থেকেও নেমে যাচ্ছে পানি। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বন্যায় যখন পুরো সিলেট প্লাবিত ছিল তখন ৬১৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছিল। এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কিছু আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবার। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন ৩৭ হাজার ১৭৬ জন বন্যার্ত। বাকিরা ফিরে গেছেন বাড়িতে। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে গিয়েও তাদের আশ্রয় মিলছে না। বেশির ভাগ মানুষের বাড়িঘর পানিতে ভেসে গেছে, নতুবা বিধ্বস্ত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। যাদের কাঁচা ঘর এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর অবস্থাও নড়বড়ে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন ব্যতীত জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৪০ হাজার ৯১টি কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ তালিকা দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকাগুলোতেও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, নগরীতে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত হলে পুনর্বাসনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।