সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চার বছরে মারা গেছে ৩৬ ডলফিন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চার বছরে মারা গেছে ৩৬ ডলফিন

ডলফিনকে বলা হয় নদীর পরিবেশ সুস্থতার নির্দেশক। পানির গুণগতমান নির্ণায়ক। নদীতে ডলফিন থাকলে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। নদীর পরিবেশ সুস্থ থাকে। ডলফিনের বড় বৈশিষ্ট হলো এরা মাছ শিকার করলে রোগাক্রান্ত, দুর্বল ও বিকলাঙ্গ মাছগুলো সহজে ধরতে সক্ষম হয়। ফলে অন্যান্য মাছের সুস্থতা রক্ষা করে। ডলফিন জলজ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। অথচ এমন জরুরি মৎস্যপ্রাণী ডলফিন এখন বিলুপ্তপ্রায় একটি প্রজাতি।  

গত চার বছরে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতেই মারা যায় ৩৬টি ডলফিন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ডলফিনের শরীরেই ছিল আঘাত ও ক্ষতচিহ্ন। হালদার ডলফিনের ওপর পড়েছে শকুনি দৃষ্টি। অপরিকল্পিত বাঁধ তৈরি, মিঠাপানির প্রবাহ কমে যাওয়া, নির্বিচারে হত্যা, মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে মৃত্যুর কারণে এদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই কমছে। ফলে পৃথিবীতে এখন মাত্র ১২ শ থেকে ১৮ শ ডলফিন আছে। পক্ষান্তরে, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ডলফিনকে লাল তালিকাভুক্ত করে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ল্যাবটি ডলফিন মৃত্যুর রেকর্ড করছে। ২০১৭ সাল থেকে গত শনিবার পর্যন্ত হালদা নদী থেকে ৩৬টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কোনোটির শরীরে ক্ষতের চিহ্ন, কোনোটি জালের মধ্যে আটকে, কোনোটির দেহে ইঞ্জিনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।  চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদী থেকে ৩৬টি ডলফিন উদ্ধার করা হয়। নৌকার আঘাত, জালে আটকা পড়ে শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া এবং অবৈধ শিকারে ডলফিন মারা যাচ্ছে বলে মনে করি।

প্রতিটি ডলফিনের মৃত্যুই হালদা রক্ষায় আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। কারণ হালদার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে দিনের পর দিন যেভাবে নষ্ট ও বিরক্ত করা হচ্ছে, তাতে হালদার গুণ ক্রমশই কমতে শুরু করেছে। তাই এখন থেকেই হালদা নদী এবং বিপন্ন প্রজাতির মিঠাপানির ডলফিন রক্ষায় জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

স্থানীয় প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, যেভাবে কিছু দিন পর পর ইঞ্জিনচালিত বোটের আঘাত, জালে আটকে ও মাছ শিকারিদের অত্যাচারে ডলফিন মারা যাচ্ছে, তাতে করে আগামীতে নদীটি ডলফিনশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই হালদা নদীর রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গহিরা এলাকার বুড়িসর্তা খালে একটি মৃত ডলফিন ভেসে ওঠে। এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ ফুট এবং ওজন প্রায় ১২০ কেজি। ১১ জুুন হালদা নদীর রাউজান উপজেলার কাগতিয়া ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে ৪৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও মাত্র ১২ কেজি ওজনের একটি মৃত বাচ্চা ডলফিন উদ্ধার করা হয়। ২৫ মে হালদা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল লাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের তেরপালি খালের মুখ থেকে ৬০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে এবং প্রায় ৩৫ কেজি ওজনের একটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়। ডলফিনটির মুখে এবং দেহে ক্ষতচিহ্ন ছিল। ১৪ এপ্রিল হালদা নদীর নয়া হাট সিপাহি ঘাট এলাকা থেকে একটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এটির মুখে জাল আটকে ছিল। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর হালদা নদীর আকবরিয়া এলাকা থেকে একটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়ে ছিল। এটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গত বছরের ৬ জুলাই হালদা নদীর শাখা খাল চানখালী খাল থেকে সাড়ে ফুট দৈর্র্ঘ্য ও প্রায় ১২০ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। গত ২৪ অক্টোবর হালদা নদীর গড়দুয়ারা এলাকা থেকে একটি, গত ৩০ সেপ্টেম্বর হালদা নদীর মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়া এলাকা থেকে ৪০ কেজি ওজনের একটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় হালদা নদী থেকে মৃত বা আঘাতপ্রাপ্ত ডলফিন উদ্ধার করা হচ্ছে। অসাধু লোভাতুরদের শকুনি দৃষ্টির কবলে পড়ে ডলফিনের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর