সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বরিশাল খুলনায় স্বপ্ন সংযোগ

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল খুলনায় স্বপ্ন সংযোগ

কচা নদীর ওপর গতকাল বেকুটিয়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানী ঢাকার পর এবার খুলনার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ভার্চুয়ালি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন। এই সেতু চালুর ফলে দুই বিভাগীয় সদর বরিশাল ও খুলনার সড়ক পথ যাতায়াতে সময় কমল অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সেতুর ফলে মোংলা সমুদ্রবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলে পণ্য পরিবহনেও সময় সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সেতু এ এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাবে বলে প্রত্যাশা সড়ক বিভাগের। মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক বরিশাল পৌঁছাতে সময় লাগত অন্তত ২৪ ঘণ্টা। কঁচা নদীর বেকুটিয়া ফেরিঘাটে গিয়ে থমকে যেত গাড়ির চাকা। অনেক সময় ফেরিঘাটে কেটে যেত ৩০ থেকে ৪৮ ঘণ্টা। গুনতে হতো দ্বিগুণ ভাড়া।

বরিশাল থেকে একটি বাস পিরোজপুর হয়ে খুলনার রূপসা ঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগত সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। মাত্র ১১০ কিলোমিটার সড়ক পথ দুই ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও বেকুটিয়া ফেরির জন্য অপচয় হতো বাকি সময়। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছেন। বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার সড়ক যেতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগত। ফেরিঘাটে কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল থেকে খুলনা যাতায়াতে অর্ধেক সময় কমেছে। এখন সোয়া ২ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই ঘণ্টায় খুলনা ও বরিশাল যাতায়াত করা সম্ভব হবে। একটি বাস এক দিনে বরিশাল-খুলনা রুটে একাধিক ট্রিপ দিতে পারবে। এতে মালিক-শ্রমিকের আয়ও বাড়বে। পণ্য পরিবহন কমিশন এজেন্ট ও বরিশালের গড়িয়াপাড় শাখা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি নাসির উদ্দিন খান বলেন, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে বিকালে একটি পণ্যবাহী ট্রাক বরিশালের উদ্দেশে ছাড়লে রাত ৯টা নাগাদ বেকুটিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছাত। যানবাহনে সিরিয়াল ও নদীতে স্রোতসহ নানা কারণে রাতে ফেরি পার হতে পারত না ট্রাকগুলো। পরদিন সকালে ফেরি পার হয়ে দুপুর নাগাদ কখনো বিকাল ঠেকে যেত ট্রাকগুলো বরিশাল পৌঁছাতে। অনেক সময় ফেরিঘাটেই ৩০ থেকে ৪৮ ঘণ্টা অলস বসে থাকতে হতো ফেরিঘাটে। এ রুটের যাত্রীরা জানান, আগে অনেকেই ফেরি যোগাযোগের কারণে কর্মস্থলে অবস্থান করে অফিস করত। এখন সেতু চালু হওয়ায় কাছাকাছি গন্তব্যের মানুষ বাসা থেকে যাতায়াত করে অফিস করতে পারবে।

বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম আজাদ রহমান বলেন, এই সেতু বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করল। কম সময়ে তারা গন্তব্যে যেতে পারবে। কৃষি, মৎস্যসহ যাবতীয় পণ্য দ্রুত সময়ে খুলনা ও বরিশালের গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে পায়রা সমুদ্রবন্দরে পণ্য পরিবহন ত্বরান্বিত হবে। এতে সময় এবং জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সেতুর ফলে এ অঞ্চলের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনমান উন্নতি হবে বলে তারা আশা করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর