মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রেলের জমি লিজের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

রেলের জমি লিজের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূমি লিজ দেওয়ার নামে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার মোহাম্মদ মুনির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। একইভাবে নগরীর বায়েজিদ এলাকার আকতারুজ্জামান রিপন নামে অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে ৯৮ লাখ টাকা। শুধু মুনির উদ্দিন ও আকতারুজ্জামান রিপন নন; অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ ঘটনায় প্রতারণার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। তবে প্রতারক চক্র রয়েছে বহাল তবিয়তে। ঘটনার শিকার মুনির উদ্দিন, আকতারুজ্জামান রিপনরা এর প্রতিকারও পাননি।

অভিযোগ রয়েছে, রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতারণার এ সিন্ডিকেটে সম্পৃক্ত রয়েছেন। চক্রটি এ কাজে রেলের প্যাড, খাম, টেলিফোন ব্যবহার করে। তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে থানা এবং আদালতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রেলের ভূমি লিজের নামে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা কেউ করে থাকলে তা অপরাধ। রেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে জড়িত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি বিধি অনুযায়ী মামলা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। রেলের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছে; তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পতিত ভূমি লিজ দেওয়ার নামে গত দুই বছর ধরে প্রতারণা করছে চক্রটি। এ চক্রের মূল হোতা রেলের এক সময়ের কর্মচারী আতিকুর রহমান অভি। যিনি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন কয়েক বছর আগে। এর পরও নিজেকে রেলের ‘বড় কর্মকর্তা’ দাবি করে এর ভূমি লিজ দেওয়ার নামে ভয়ংকর প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রতারণায় অভির সহযোগী তার স্ত্রী ও রেলওয়ের হিসাব বিভাগের অফিস সহকারী বিবি কুলসুম পপি, রেলওয়ের সিএসটি বিভাগের প্রধান সহকারী মোহাম্মদ নাছির এবং রেলওয়ের ফিল্ড কানুনগো মো. মনজুর মোরশেদ।

প্রতারক চক্রের হোতা অভি রেলের ভূমি লিজ নিতে ইচ্ছুক এমন লোকজন সংগ্রহ করেন। ফিল্ড কানুনগো মোরশেদ রেলের ভূমি নকশা তৈরি করে লিজ নিতে আগ্রহীদের আকৃষ্ট করেন। পরে পপী ও নাছির রেলওয়ের ফোন ব্যবহার করে লিজ প্রত্যাশিদের সাথে কথা বলেন। তারা ভুয়া লিজ ও কথিত চুক্তিপত্রে রেলের খাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে চিঠিও আদান-প্রদান করেন। জানা গেছে, প্রতারণার অভিযোগে অভি, পপি এবং নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে তিনটি। আদালতেও একাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চারটি মামলার কপি এবং তাদের তৈরি ভুয়া লিজপত্র, চুক্তিপত্র, ব্যাংকের চালান কপি হাতে এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে। রেলের ভূমি লিজে নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুনির উদ্দিন বলেন, ‘অভি, পপি, নাছির এবং মোরশেদ আমাকে রেলের ভূমি লিজ দেওয়ার কথা বলে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা টাকা নেওয়ার আগে আমাকে রেলের খাম ও প্যাড ব্যবহার করে চিঠি দিয়েছে। লিজ অনুমোদনপত্র দিয়েছেন।

এমনকি রেলের টেলিফোন ব্যবহার করে অসংখ্য বার ফোনও করেছেন। কিন্তু যখন ভূমি বুঝিয়ে না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে, তখন বুঝতে পারি আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। প্রতারিত হয়ে আমি তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। আমার জানা মতে, তারা চট্টগ্রামের কমপক্ষে ১৫ ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

এ চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার নগরীর বায়েজিদ এলাকার আকতারুজ্জামান রিপন বলেন, ‘রেলের ভূমি  লিজ দেওয়ার কথা বলে অভিসহ রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে আমার কাছ থেকে ৯৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর