দেশের স্বার্থে কারও সঙ্গেই কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ আপস করবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ভালো প্রতিবেশী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্বের সব দেশই ভালো প্রতিবেশী প্রত্যাশা করে। ১৫ বছর আগে যখন ট্রানজিট ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে সস্তা রাজনীতি হয়েছিল, তখন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকি নিয়েই ট্রানজিট করেছিলেন। এখন সেই সুফল সবাই ভোগ করছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে জেআরসির বৈঠক হওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, পানি সংকট সমাধানে চীন ও ভুটানের সঙ্গেও একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে জেআরসি ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে উল্লেখযোগ্য বৈঠক হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কানেকটিভিটি ও ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সম্ভব হয়েছে। আমাদের জিডিপির গ্রোথ এখন উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে হাইড্রো রিসোর্স না থাকায় ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আমাদের এ সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ আসিয়ান, বিমসটেক, সার্কসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতি বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই এককভাবে প্রভাবিত করেছে। নেপাল, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ভিজিটে জোর দেওয়া হয়েছে।

নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ডিউটি ফ্রি ব্যবসা-বাণিজ্য উপভোগ করছে বাংলাদেশ। পারস্পরিক অংশীদারি ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রতিমন্ত্রী ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, পানি ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা এবং মানবিক সংকটে পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে আঞ্চলিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করবার কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং পারস্পরিক উন্নয়নের জন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।

বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে এশিয়ার গুরুত্ব কৌশলগত কারণে বৃদ্ধির ফলে এশিয়ার পুনরুত্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার এবং আঞ্চলিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধান খুঁজতে বহুপক্ষীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ও কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বিশ্বের দেশগুলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে কঠিন সময় পার করছে। সুতরাং বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে এ সময় অতিক্রম করতে হবে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিইআইয়ের সভাপতি ও কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, সাবেক কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, গবেষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন এবং উন্মুক্ত আলোচনা অধিবেশনে তাদের মতামত তুলে ধরেন।