রাজধানীর সব উৎসব ঘিরে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। উৎসব উদযাপন ঘিরে জনবহুল স্থান টার্গেট করে ছিনতাই চালিয়ে আসছিল একটি চক্র। রাকেশ ও মান্নান নামে দুজন এই ছিনতাই সিন্ডিকেটের হোতা। মতিঝিল, মুগদা, ওয়ারী, খিলগাঁও, বংশাল, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতাসহ ২৯ জনকে আটক করেছে র্যাব। বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযানে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকা জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর টিকাটুলিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন। আটকরা হলেন- রাকেশ ওরফে কালাচাঁন, মান্নান, ইমরান গাজী, আকাশ, ইসরাফিল, সিয়াম, মানিক, নাহিদ পারভেজ, আরাফাত, শাকিল, রিয়াদ, আবদুল রব মিয়া, সাইফুল ইসলাম, রাসেল, ইসমাইল, লোকনাথ রাজবংশী, শম্ভুচন্দ্র দাস, শামীম, রাজু, মোজাফ্ফর, হাসান, হৃদয়, আরিফ, আতিকুল ইসলাম, হেলাল, রুবেল, রতন ওরফে মানিক, তছলিম ও আনোয়ার। রাকেশ ও মান্নান ছিনতাই সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন পরিচালনা করছিল। সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, পয়লা ফাল্গুন এবং বইমেলা কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশে তাদের তৎপরতা ছিল। আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিতেও ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল চক্রটির। এরা সুযোগ পাওয়া মাত্রই পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ছিনতাইয়ে বাধা দিলে প্রাণঘাতী আঘাতের ঘটনাও ঘটে। র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, তারা টার্গেট ব্যক্তিকে আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে। টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সুবিধা মতো জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে চক্রের অন্য সদস্যরা গিয়ে টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে। এরই ফাঁকে তাদের কেউ টার্গেট ব্যক্তির টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
এদিকে বুধবার মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ সময় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, চাপাতি, ছুরি জব্দ করা হয়। তারা হলেন- মফিজুল ইসলাম ওরফে সোহেল ওরফে মামা, মোহাম্মদ আলী এবং ড্রাইভার হান্নান মিয়া ওরফে হানিফ।
গতকাল মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, এই চক্র ভোর ৬টা থেকে ঢাকা জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরে। এরপর ভাড়ায় যাবে বলে যাত্রী ওঠায়। যাত্রী ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দুইপাশ থেকে আরও দুজন এসে ওঠে। তারা প্রথমেই সেখানে ফিতা দিয়ে যাত্রীর হাত বেঁধে ফেলে এবং চোখে চশমা পরিয়ে দেয়। এরপর সঙ্গে থাকা সব টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে লাঠি দিয়ে পায়ে মারতে থাকে এবং মোবাইলে বাসা থেকে টাকা আনতে বলে। এতে কেউ অস্বীকার করলে তখন চাপাতি ও ছুরি দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।