রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বরিশাল নগরীর পাঁচ খাল নিশ্চিহ্ন

পাঁচটির প্রাণ যায় যায়

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল নগরীর পাঁচ খাল নিশ্চিহ্ন

বরিশাল নগরীতে প্রবহমান ২৩টি খালের মধ্যে পাঁচটি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আরও পাঁচটি খাল দখল-দূষণে হত্যা করছে দুই তীরের বাসিন্দারা। বাকি খালগুলো পরিণত হয়েছে ড্রেনে। অথচ এসব খালে এক সময় চলত গয়না নৌকা ও বজ্রাসহ ছোট ছোট লঞ্চ। এসব এখন ইতিহাস! দীর্ঘ অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতান্ডঅবহেলা-অযোগ্যতার কারণে খালগুলোর করুণ দশা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। উল্লিখিত খালগুলোর মধ্যে সাতটি খাল পুনঃখনন করতে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড টেন্ডার আহ্বান করলেও ওইসব খাল নিয়ে সিটি করপোরেশনের বৃহৎ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে নগরীর সাগরদী খালের ৭ কিলোমিটার পুনঃখনন এবং কীর্তনখোলার সংযোগস্থল থেকে ১.৩৫ কিলোমটারের দুই তীরে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন, ফুটওভার ব্রিজ, স্ট্রিট লাইট, বেঞ্চ ও সবুজায়নে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশনের হিসেবে পুরনো এবং বর্ধিতাংশ মিলিয়ে ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নগরীতে খাল রয়েছে ৪৮টি। তবে সিএস এবং আরএস ম্যাপ অনুযায়ী খাল আছে ২৩টি। পরবর্তীতে খালগুলো পুনঃখননের সুবিধার্থে ৪৮টি প্যাকেজ (নির্দিষ্ট দূরত্ব এক প্যাকেজ) করা হয়। প্যাকেজ হিসেবে ৪৮টিকে খাল হিসেবে গণ্য করছে সিটি করপোরেশন। খালগুলোর প্রশস্ততা ছিল সর্বনিম্ন ২৫ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৭০ ফুট। এর মধ্যে আটটি খাল সরাসরি মিশেছে কীর্তনখোলা নদীতে। সবগুলোর সংযোগস্থলে প্রতিনিয়ত চলছে দূষণ। বটতলা খাল কুঁদঘাটা খালের সঙ্গে ভায়া হয়ে মিশেছে সন্ধ্যা নদীর সাথে।

খালগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শেরেবাংলা মেডিকেলের সামনে চরের বাড়ি এলাকায় সিএস-আরএস ম্যাপে থাকা শোভারানীর খালের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ওই খালের ওপর গড়ে উঠেছে শতাধিক পাকা দালান-ঘরবাড়ি। কীভাবে সরকারি খালের ওপর বহুতল ভবন-পাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই স্থানীয়দের কাছে। একইভাবে ভাটারখাল থেকে শুরু করে জিলাস্কুল-বগুড়া রোড-নতুনবাজার খাল, বটতলা-চৌমাথা নবগ্রাম খাল, নাপিতখালী খাল এবং চাঁদমারী খালের দুটি শাখার একটি একেবারে হারিয়ে গেছে। আইসিইউ কিংবা লাইফ সাপোর্টের মতো কোনো রকম চিহ্ন আছে জেলখাল, আমানতগঞ্জ খাল, সাগরদী খাল, লাকুটিয়া খাল এবং জিয়া সড়ক খালের। লাকুটিয়া খালের ২৩টি স্থানে ব্রিজ নির্মাণের নামে খালটি সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। এভাবে নবগ্রাম খাল, নাপিতখালী খাল এবং জেলখালের বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ নির্মাণের নামে খালগুলো হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।  ২০০৮ সালে এক জরিপে জেলখালের উভয় পাড়ে ২২৬ জন দখলদার চিহ্নিত করে সিটি করপোরেশনে জমা দেয় নাগরিক কমিটি। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এক আদেশে জেলখাল দখলমুক্ত ও খনন করে সচল রাখতে নির্দেশ দেয় সরকারকে।  সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, ২০১৩-২০১৪ সালের দিকে তৎকালীন মেয়র নগরীর সবগুলো খাল খননের জন্য দুবার বড় প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। আর্থিক মূল্যমান না থাকা এবং সক্ষমতার অভাবে দুবারই প্রকল্প ফিরিয়ে দেয় সরকার।

বরিশাল নদী খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, দীর্ঘ অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বশীলদের অযোগ্যতায় খালগুলোর করুণ পরিণতি হয়েছে। যে যখন মেয়র হয়েছে তিনিই দলের স্বার্থে সিটি করপোরেশনকে ব্যবহার করেছে। নগরবাসীর কল্যাণ করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব ছিল তাদের।

সম্প্রতি সাগরদী খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধনকালে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ জানান, নগরীর ৪৬টি খাল পুনঃখনন, গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর দুই তীর সংরক্ষণ, সৌন্দর্য বর্ধন, সবুজায়নের জন্য ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে সাগরদী খালের আদলে সবগুলো খাল পুনঃখনন এবং সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর