সোমবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিলেটে নৌকায় নেই আওয়ামী লীগ

শমসের মবিন ও হুছামুদ্দীনে নতুন মেরুকরণ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে নৌকায় নেই আওয়ামী লীগ

সময় যত ঘনিয়ে আসছে সিলেটে ভোটের মাঠে তত চমক দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন আসনে নৌকা ছেড়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভিড়ছেন স্বতন্ত্র ও ভিন্ন আদর্শের প্রার্থীদের প্রতীকে। নৌকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা। এর মধ্যে শেষ সময়ে সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলতলী পীরের ছেলে, আঞ্জুমানে আল ইসলার সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নির্বাচনের নতুন মেরুকরণ। দলীয় নেতা-কর্মীদের এমন ‘ইউটার্নে’ রীতিমতো বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে নৌকার প্রার্থীদের। নির্বাচনি ‘সমঝোতায়’ এ দুটি আসনে নৌকার প্রার্থী রাজনৈতিক ‘বলি’ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

সিলেট-৬ আসনে মোট প্রার্থী ছয়জন। এর মধ্যে শুরু থেকে ভোটের মাঠ জমিয়ে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ) সরওয়ার হোসেন ও জাতীয় পার্টির মো. সেলিম উদ্দিন। এই তিন প্রার্থীর জনসমর্থন ও প্রচারণার কাছে ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছিলেন না তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগহীনতা ও সাংগঠনিক ইউনিট থাকায় শুরু থেকেই তিনি কর্মী-সমর্থক সংকটে পড়েন। ফলে হেভিওয়েট এই প্রার্থী ভোটের মাঠে ছিলেন অসহায়। কিন্তু গেল কয়েকদিন থেকে দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একাংশের নেতারা নৌকা ছেড়ে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মবিনের সোনালি আঁশের পক্ষে মাঠে নামেন। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে শমসের মবিনের পক্ষে ভোট চাইছেন। এতে দিন দিন ভোটের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। পাল্লা ভারী হচ্ছে শমসের মবিন চৌধুরীর।

সিলেট-৬ আসনে নৌকা ছেড়ে তৃণমূল বিএনপির পক্ষে যারা প্রচারণায় নেমেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম। এ ছাড়াও গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহেল আহমদ, সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মামুন আহমদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রুহিন আহমদ খান, পৌর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক স্বপন কান্তি কর ও নুরুল আলম খান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ইউছুফ আলী, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন পুতুল ও সাদেক আহমদ, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা তাজির উদ্দিন, হাদিউজ্জামান মাছুম, জুবায়ের আহমদ জেবুল, আবদুল মালেক, বেলাল আহমদ, দেলোয়ার আহমদ, জিয়া উদ্দিন, মাজেদ শরীফ চৌধুরী ও নাদিম মাহমুদ শিপলু।

এদিকে, সিলেট-৬ এর মতো একই অবস্থা সিলেট-৫ আসনে। আসনটি থেকে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন মাসুক উদ্দিন আহমদ। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আহমদ আল কবীর। প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতা-কর্মী নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তারা এখন নৌকা ছেড়ে ঝুঁকছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলতলী পীরের ছেলে, আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরীর কেতলি প্রতীকে। ফলে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জে পড়েছে নৌকা।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমদ আল কবীরের ট্রাক ও মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরীর কেতলি প্রতীকে। মাওলানা হুছামুদ্দীনের পক্ষে আওয়ামী লীগের পদধারী কোনো নেতাকে প্রচারণায় দেখা না গেলেও জকিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি লোকমান উদ্দিন নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন বলে নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন। তার অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা হুছামুদ্দীনের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও কাজলসার ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আম্বিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম, সহসভাপতি আবিদ চৌধুরী, অর্ণব পুরকায়স্থ, জামিল আহমেদ, আতিক আহমদ, নিবাস দাস, হাসিম আহমদ ও দুলাল আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন সাগর ও আবদুল্লাহ আল মিনহাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর জামিল, খালেদ আহমদ, মিজান আহমদ, আসিকুর রহমান চৌধুরী ও ফাহিম আহমদ, জকিগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি হুমায়ুন রশীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  বিরাজ শর্মা বিধু ও সাংগঠনিক সম্পাদক জারাফ হোসেন আরিয়ান।

সর্বশেষ খবর