শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক। এটি প্রতিনিয়ত মানুষকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করার পাশাপাশি মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই শব্দদূষণ রোধে এবং এ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি সচেতনতামূলক র্যালি। গতকাল আবাসিক এলাকাটির ডি ব্লক বড় মসজিদের সামনে র্যালির আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিন’। এতে সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি বসুন্ধরা হাউজিং, আপন ফ্যামিলি মার্ট, জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, দোয়েল ডেভেলপমেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এভারকেয়ার হাসপাতাল ও ওয়ালটনের সদস্যরা অংশ নেন। র্যালিটি বড় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আপন ফ্যামিলি মার্ট হয়ে ক্যাফে লিও-তে এসে শেষ হয়। র্যালিতে অংশ নেওয়াদের হাতে শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব-সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা যায়।
র্যালির শুরুতে এভারকেয়ার হাসপাতালের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট ডা. নাজিয়া জিহান বলেন, ‘সুস্থ একটি গর্ভধারণ মানেই হচ্ছে সুস্থ একটি ভবিষ্যৎ, সুন্দর একটি জাতি। শব্দদূষণ গর্ভধারণে মায়েদের যেমন ক্ষতি করছে, তেমনি গর্ভের বাচ্চার জন্যও এটি খুবই ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় শব্দদূষণ মায়েদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন অনেক বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে তার শরীরে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন এগুলো বাসা বাঁধছে।’ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘আমাদের হর্ন দেওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মধ্যে এমন একটি মানসিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, কার গাড়ির হর্ন কত বেশি হবে। এমন একটি ধারণা, গাড়ির হর্ন শক্তিশালী হয়ে দ্রুত সাইড কেটে চলে যেতে পারবে। এগুলো আমাদের পরিহার করতে হবে।’ র্যালির আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের মানুষের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। আমরা পানি, বায়ু ও শব্দদূষণের মধ্যে বেঁচে আছি। আমরা যদি নিজেরা সচেতন না হই, তাহলে দূষিত সমাজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না।’ দোয়েল ডেভেলপমেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হচ্ছে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে গোছানো, সাজানো সুন্দর একটি এলাকা। সমস্যা হচ্ছে পরিবেশ নিয়ে। আমাদের এত সুন্দর এলাকার মধ্যে অযথা হর্ন বাজানো হয়। এ ধরনের কাজ যাতে না হয়, সেজন্য আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।’ কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিনের হেড অব অ্যাডমিন মশিকুর রহমান বলেন, ‘শব্দদূষণে ঢাকা শহর পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বরে আছে। আমাদের শহর যদি আমরা ঠিক না করি, তাহলে কেউই আমাদের এ শহর ঠিক করার জন্য আসবে না। বসুন্ধরা আমাদের নিজস্ব এলাকা, তাই আমরা শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম এখান থেকে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে আমরা অন্যান্য আবাসিক এলাকায় যাব। বসুন্ধরা এলাকায় যারা থাকেন, তাদের সবাইকে আমি অনুরোধ জানাব, গাড়ি চালালোর সময় যতটা সম্ভব হর্ন কম বাজানোর জন্য। আর বসুন্ধরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোক্তার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সুস্থ দেহ, সুস্থ মনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশের একটি বড় বাধা শব্দদূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, সর্বোচ্চ নীরব ঘাতকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্চে শব্দদূষণ। এ দূষণ প্রতিরোধে সময়োপযোগী এ র্যালি আয়োজন করার জন্য আমি কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’