বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের চারটি স্তরে (লেভেল) ভাগ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম স্তর হলো দেশেই করোনাভাইরাস থাকা, দ্বিতীয় স্তর হলো বিদেশফেরত মানুষের মাধ্যমেই করোনা সংক্রমণ হওয়া, তৃতীয় স্তর হলো কমিউনিটি ব্যাসড (স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে) একটু একটু সংক্রমণ হওয়া এবং চতুর্থ হলো দেশে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সংক্রমণ হওয়া। এর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তুরে অবস্থান করছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বর্তমানের দ্বিতীয় স্তরেই যদি করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে দেশে করোনা আতঙ্ক কমার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এখন সরকারের কাছে লেভেল-২ তে করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা সরকারি নির্দেশনা না মেনে ইচ্ছা মত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে দ্বিতীয় স্তরে ধরে রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। গত রবিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৯৭৩ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়।
অভিযোগ আছে, বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য সরকার ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু তারা সরকারি এ নির্দেশনা কোনো মতেই মানছেন না। বিদেশ থেকে দেশে আসার পর ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টাইন না মেনে এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণ (ইউএনও) নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছেন। তবুও তাদের হোম কোয়ারাইন্টাইনে রাখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন চলছে অভিযান, করা হচ্ছে জরিমানা।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘বিদেশ ফেরতদের যেকোনো মূল্যেই ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে আছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ১৫ উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে অন্তত ১৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিদিনই চলছে অভিযান। আমরা চাই, তারা যেন সরকারি নির্দেশনা মেনে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকুক।’
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজের (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণে চারটি লেভেলকে (স্তর) মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে আছে। সরকার এবং সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা যদি এই দ্বিতীয় স্তরেই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে এটি হবে সকলের জন্য উপকার। এ ব্যাপারে সকলকেই উদ্যোগী, সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা আছে বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে। এখন যদি তারা বিষয়টি না মানে তাতে সারাদেশেরই ক্ষতি। কারণ বর্তমানে সরকারের লক্ষ্য দ্বিতীয় স্তরেই এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপট, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, বিদেশ ফেরতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে দেশে কমিউনিটি সংক্রমণ (তৃতীয় স্তর) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ এবং সামলাতে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও তাঁদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহ হলেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং জনসমাগম কঠোরভাবে বন্ধ করা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার