শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দখলদারদের দৌরাত্ম্যে মৃত তিন নদী

মেহেরপুর প্রতিনিধি

যে নদীগুলোর বুক চিরে চলার সময় নাবিকের বুক কাঁপত। যাদের ছিল এক সময় ভরা যৌবন। দখলদারদের দৌরাত্ম্যে সেই নদীগুলো এখন খেলার মাঠ, পশু চারণভূমি আর ধানখেতে পরিণত হয়েছে। নদীগুলো হলো- মেহেরপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা, কাজলা ও ছেউটিয়া। জানা যায়, নদীপথেই কলকাতার সঙ্গে মেহেরপুর তথা বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল মাথাভাঙ্গা। নদীটির বিভিন্ন অংশের দখল নিয়ে এখন মালিকানা দাবি করছে এলাকার কিছু ব্যক্তি। কয়েকজন চাষি জানান, দখলদাররা নদীর জমিতে ধান চাষ করেন। বাঁধ দিয়ে পুকুর কেটে চাষ করছেন মাছ। ফলে সাধারণ মানুষ মাছ ও সেচ দেওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলার আরেন ‘মৃত’ নদী কাজলা। কাজীপুর ইউনিয়নে মাথাভাঙ্গা থেকে প্রবাহিত হয়ে নপাড়া, ভাটপাড়া, সাহারবাটি, গাড়াডোব হয়ে আমঝুপিতে গতি বদল করে কাজলা এক সময় গিয়ে পড়েছিল ভৈরবে। নদীটি দখলদারদের থাবায় নাব্য হারিয়ে সবুজ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পুরো কাজলা ফসলের চাষ, ফুটবল খেলা আর গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

 এ নদীর জমিতে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মেহেরপুরের গাংনী থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অপর একটি নদী ছেউটি। এটি মাথাভাঙ্গার শাখা। এ নদীর দুই মাথাই এখন মৃত। এ প্রবহমান কোনো নদীর সঙ্গে ছেউটির যোগসূত্র নেই। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোনো সময়ে ছেউটি নদীতে পানি থাকে না। জানা যায়, ২০০৭ সালে মেহেরপুর ভূমি কমিশনার এরাদুর রহমান নদী দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি চেয়ে পত্র দিয়েছিলেন। সে ফাইলের আজও কোনো হদিস নেই। ওই পত্রে বলা হয়েছিল, শুধু সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নে ৫০০, বুড়িপোতা ইউনিয়নে ৪৭ এবং শহর এলাকায় ২৮৮ জন নদী দখল করে আছে। আর পুরো জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বলেন, নদীগুলো পুনর্খনন করা হলে শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধা সৃষ্টি ও বর্ষায় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সারা বছর ফসল উৎপাদনের পথ সুগম হবে। এতে এলাকার বার্ষিক শস্য উৎপাদন হবে দ্বিগুণ। মেহেরপুরবাসীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে নবদিগন্তের সূচনা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর