রবিবার, ৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মানিকগঞ্জে তালের শাঁস ও ডাব বিক্রির ধুম

মো. কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে তালের শাঁস ও ডাব বিক্রির ধুম

মানিকগঞ্জের সর্বত্রই তালের শাঁস ও ডাব বিক্রি হচ্ছে সমানতালে। প্রচন্ড গরমে একটু স্বস্তির লক্ষ্যে লোকজন ডাব এবং তালের শাঁস খেতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। একদিকে তাল ও নারিকেল গাছ নির্বিচারে কাটা হচ্ছে অন্যদিকে বীজের অভাবে নতুন করে চারা রোপণ হচ্ছে না। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এর বংশবৃদ্ধি না হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশ সচেতন মহল। অত্যন্ত সুস্বাদু ও হাতের নাগালে পাওয়ায় সব শ্রেণির মানুষ এই তালের শাঁস ও ডাব ক্রয় করে খাচ্ছেন। পরিবারের লোকদের খাওয়াচ্ছেন। গাছের মালিকরা ভালো দাম পাওয়ায় পাকার আগেই গাছ থেকে কাঁচা তাল ও ডাব বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পাকা তালবীজ ও পাকা নারিকেলের  অভাবে  বীজ সংকটে পড়ে তাল গাছ ও নারিকেল গাছের বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একসময় মানিকগঞ্জের সর্বত্রই বড় বড় তাল ও নারিকেল গাছ ছিল। এসব গাছে বাস করত শকুন, চিল, বাজপাখি, বাবুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এসব গাছ কমে যাওয়ায় পরিবেশবান্ধব পাখিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাল গাছ বজ্রপাত নিরোধ, পরিবেশবান্ধব, মাটির ক্ষয়রোধসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী গাছ হিসেবে বিবেচিত। তাছাড়া অল্প জায়গায় গাছগুলি বেঁচে থাকে অনেকদিন। বিভিন্ন প্রয়োজনে তাল, নারিকেল  গাছ কাটা হলেও বীজের অভাবে রোপণ করা হচ্ছে না। ফলে দ্রুত তাল নারিকেল গাছ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন বৃক্ষপ্রেমীরা। তালের শাঁস বিক্রেতা ঘিওর উপজেলার রবিউল জানান প্রতিদিন তিনি ৪০০ থেকে ৫০০ তাল শাঁস  বিক্রি করেন। জেলায় তার মতো দুই শতাধিক ব্যক্তি তালের শাঁস ও ডাব বিক্রির সঙ্গে জড়িত। ভালো দাম পাওয়ায় সবাই কাঁচা তাল ও ডাব বিক্রি করে দেয়। মানিকগঞ্জের সর্ববৃহৎ এম ডিপিওডি নার্সারি প্রধান মো. এন্তাজ আলী বলেন মানিকগঞ্জের কোথাও বাণিজ্যিকভাবে তাল ও নারিকেলের চাষ হয়নি। ভালো দাম পাওয়ায় পাকার আগেই কাঁচা তাল ও ডাব বিক্রি হয়ে যায়। পাকা তাল ও নারিকেলের অভাবে আমরা নার্সারিতে চারা রোপণ করতে পারছি না। খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এম মুজিবুর রহমান বলেন, মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে। কষ্ট করে কেউ আগের মতো তাল নারিকেলের পিঠা তৈরি করেন না। অতি সহজে ডাব ও তালের শাঁস খাওয়া যায়। লোকজন সহজেই এগুলো গ্রহণ করছেন।

প্রয়োজনে মানুষ তাল ও নারিকেল গাছ কেটে ব্যবহার করছেন। কিন্তু চারার অভাবে নতুন করে এসব গাছ রোপণ করা হচ্ছে না। এ ধরনের বড় বড় গাছ ধ্বংস হওয়ার কারণে মানিকগঞ্জে বজ্রপাতের হার বেড়েছে। সে সঙ্গে ব্যাপক হারে প্রাণহানি ঘটছে। দেশের স্বার্থে পরিবেশের স্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাল ও নারিকেল চারা রোপণ করা উচিত। মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাহজাহান আলী বিশ্বাস জানান তাল, নারিকেল গাছে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে লোকজন ডাব ও তালের শাঁস খেলেও গাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হবে না।

সর্বশেষ খবর