রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বরিশালে ইলিশ ধরা চলছেই

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর চলছে নিধন

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে ইলিশ ধরা চলছেই

মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে দেশের ৩৮ জেলার ১৭৪টি উপজেলার নদ-নদী ও সাগরে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে নদীবেষ্টিত বরিশালে এ নিষেধাজ্ঞা অনেকাংশেই কার্যকর হচ্ছে না। দিনে এবং রাতে সমানতালে চলছে ডিমওয়ালা মা ইলিশসহ অন্যান্য মাছ নিধন। যদিও গত ছয় দিনের অভিযানে ৮৪ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড, ১৮ জনকে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা এবং ৬৮২ কেজি ইলিশসহ ৩ লাখ মিটার অবৈধ জাল উদ্ধার করেছে প্রশাসন।  আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরের ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সাগর থেকে মিঠা পানিতে চলে আসে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে এ ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু হিজলা উপজেলা সংলগ্ন মেঘনা নদীর জানপুর, খালিশপুর, চরআবুপুর, আশুলিয়া আবুপুর, ডেগুয়া, অন্তরবাম, চরমেঘা, বসুপট্টি, মাটিজালা ও পুরাতন হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার কালীগঞ্জ ও আলীগঞ্জ, মুলাদীর জয়ন্তি নদীর আবুপুর থেকে ছবিপুর, আড়িয়াল খাঁ নদের পশ্চিম চরকালে খাঁ থেকে পাতারচর, রামচর থেকে নাজিরপুর, নন্দিরবাজার থেকে মীরগঞ্জ, সুগন্ধা নদীর মীরগঞ্জ, সন্ধার নদীর উজিরপুর ও বানারীপাড়া পয়েন্টে জেলেরা মাছ শিকার করছে অনেকটা নির্বিঘ্নে।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এবং প্রশাসন এসব নদ-নদীতে অভিযান চালালেও বিশাল জলরাশিতে তা একেবারেই সামান্য। হিজলার মেঘনায় মাছ শিকারের প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম হোসেন বলেন, নদ-নদীতে জোয়ার আসার সময় ইলিশ শিকারে নামেন জেলেরা। ভরা জোয়ারের সময় তারা নদী থেকে উঠে যান। এভাবে দিনে দুই দফা জোয়ার আসার সময় মাছ শিকারের উৎসব চলে হিজলার বিভিন্ন নদীতে। স্থানীয়রা জানান, জেলেরা মাছ শিকারে নামার আগে অদূরে তাদের নিয়োজিত এজেন্ট পাহাড়ায় রাখেন। দূর থেকে কোনো অভিযান দেখলেই ওই পাহাড়াদার ফোনে মাঝ নদীতে মাছ শিকাররত জেলেদের খবর দেন। প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সেখানে পৌঁছার আগেই নিরাপদে চলে যান তারা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসাধু মৎস্য কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিকাশে কমিশন পাঠিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট পয়েন্টে জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করেন বলে ওইসব এলাকায় প্রচলিত আছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে বলে জানিয়েছেন, বরিশাল মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এবং উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ বিরামহীন অভিযান চালাচ্ছে। বিশাল এলাকা হওয়ায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অভিযানে যাওয়ার পথে খবর পেয়ে জেলেরা নিরাপদে চলে যান। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর প্রথম ছয় দিনে বরিশাল জেলায় ৬৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এ সময় ১০২ মামলায় ৮৪ জন জেলেকে ১৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদন্ড  এবং ১৮ জন জেলেকে ৮২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় ৬৮২ কেজি ইলিশসহ দেড় লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর