সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতার কবলে বিসিক শিল্পনগরী

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

জলাবদ্ধতার কবলে বিসিক শিল্পনগরী

জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরী। দীর্ঘ ৫ মাস জলাবদ্ধ থাকায় শিল্প উদ্যোক্তারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন, পানি, বিদ্যুৎ, লাইটপোস্ট ও জরাজীর্ণ পরিবেশসহ নানা সমস্যায়  জর্জরিত এ শিল্পনগরী। রয়েছে লোকবল সংকট। করোনার কারণে ও বর্তমানে জলাবদ্ধতার ক্ষতির মুখে পড়ে শিল্পনগরীর উৎপাদন কমেছে ৫০ শতাংশের নিচে। জলাবদ্ধতা ও নানামুখী সংকটে কোনোভাবেই সম্প্রসারণ হচ্ছে না সাতক্ষীরার এই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উৎপাদন কার্যক্রম। শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপকের দাবি সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা ও ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে বেতনা নদী খননের মাধ্যমে শিল্প নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে শিল্পনগরীর কোটি কোটি টাকার উৎপাদন অনেক অংশে কমে আসবে। শিল্প উদ্যোক্তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে। প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীতে। ১৯৮৭ সালে ১৫.৭৫ একর জমির উপর শহরের বিনেরপোতা এলাকায় বেতনা নদীর তীরে গড়ে উঠে এ শিল্পনগরী। এখানে ৯৭টি প্লটের মধ্যে দুটি প্লট মধু প্রসেসিং এর জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। বাকি ৯৫টি প্লটের মধ্যে চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি, দুগ্ধ শিতলীকরণ, বেকারী, পোলট্রি ইনকিউবেটর, পান্ডে প্লাষ্টিক ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ , চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা চালু রয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ মাস জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন শিল্প উদ্যোক্তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে এ শিল্পনগরীর প্রতিটি ইউনিটের রাস্তাঘাটের বিটুমিন উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দক। বিভিন্ন প্লটে হাঁটু ও রাস্তায় হাঁটু পানি জমে আছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো রাস্তা না থাকায় দীর্ঘ পাঁচ মাস এখানে জলাবদ্ধতা থাকে। জলাবদ্ধতার কারণে এখনো মিল-ফ্যাক্টরির ভিতরে পানি জমে আছে। নেই সীমানাপ্রাচীর ও পুলিশ ফাঁড়ি। রাতে বাতি জ্বলে না। ফলে বখাটাদের উৎপাত ও চুরিদারি বৃদ্ধির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। পান্ডে প্লাষ্টিক ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সুরেশ পান্ডে জানান, করোনায় তাদের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। দীর্ঘ ৩ মাস জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে ১ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কোন প্রডাকশনে যেতে পারেনি তার ফ্যাক্টরি। তিনি আরও জানান, রাস্তাঘাটের বিটুমিন উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।

রাস্তা ও ফ্যাক্টরির সামনে কাদা। কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। এভাবে একটি শিল্পনগরী চলতে পারে না। শিল্প নগরীর জায়গা ও ড্রেন দখল করে যারা অবৈধভাবে বসতঘর নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে রেখেছে তাদের অবিলম্বে উচ্ছেদসহ জলাবদ্ধতা নিরশনে স্থানীয় এমপি, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ও রনি প্লাইউড অ্যান্ড স্টোর ইন্ডাস্টিজের স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম রনি বলেন, এখানে সীমানা প্রাচীর নেই, রাতে বাতি জ্বলে না, পানির প্লান্ট নষ্ট, পানি সরবরাহ হয় না। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নেই। বখাটেদের উৎপাত। ১৫ দিন আগে তার ফ্যাক্টরির সামনে থেকে গাড়ির চাকা থেকে টায়ার খুলে নিয়ে গেছে চোরে। রাতে নৈশ প্রহরী নেই। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিলেও সুযোগ-সুবিধার কোনো বালাই নেই বিসিকে। ব্যবসার কোনো পরিবেশ নেই এখানে। সর্বত্র শুধু সমস্যা আর সমস্যা। সাতক্ষীরা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, করোনা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে উৎপাদন ক্ষমতা কমে ৫০ শতাংশের নিচে  নেমে এসেছে। পূর্বে প্রতি মাসে এই শিল্পনগরী থেকে ১০-১২ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হলেও সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ থেকে ৪ কোটিতে। তবে এই বিসিক শিল্প নগরীর উন্নয়নে সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা ও ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। একটি অফিস ভবন নির্মাণ হবে। তবে এখানকার বর্তমান প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। জনবল সংকট প্রকট। ১৩টি পদের বিপরীতে ৭ জন বিদ্যামান রয়েছে। কার্যক্রম পরিচালনা করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ পার্শ্ববর্তী বেতনা নদী খননের মাধ্যমে বিসিক শিল্পনগরীর জলাবদ্ধতা নিরশন করতে পারলে ব্যাপকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসার ঘটবে।

সর্বশেষ খবর