বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিজয়নগরের লালির কদর দেশজুড়ে

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বিজয়নগরের লালির কদর দেশজুড়ে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে তৈরি হচ্ছে লালি গুড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দীর্ঘ সময় আখের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু লালি। কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা বিজয়নগরে এখন চলছে লালি গুড় তৈরির মৌসুম। এক সময় বিজয়নগরে প্রচুর পরিমাণে আখের চাষ হতো। অন্য ফসল চাষ অধিকতর লাভজনক হওয়ায় কৃষক আখ চাষে আগ্রহ কমিয়েছেন। চলতি মৌসুমে বিজয়নগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের শীত মৌসুমে মজাদার যেসব খাবার তৈরি হয় তার মধ্যে অন্যতম আখের রসে তৈরি লালি গুড়। এই লালি দিয়ে ঘরে ঘরে তৈরি পিঠা-পুলি শীতের খাদ্য তালিকা আরও সমৃদ্ধ করে। বিজয়নগরের লালির কদর রয়েছে দেশজুড়ে। নানা অঞ্চলে পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রি হয় লালি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি শীত মৌসুমে বিজয়নগরে প্রায় ৯০ মেট্রিক টন লালি বিক্রি হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। উপজেলায় প্রতি শীত মৌসুমেই লালি তৈরি করে স্থানীয় কৃষক পরিবার। বছরের চার মাস লালি তৈরি করে বাড়তি টাকা আয় করেন তারা। লালি তৈরি করেন এমন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি আখের মৌসুম। এই সময় শীতের প্রকোপ বেশি হয়। ফলে চার মাস বিজয়নগর উপজেলায় উৎপাদিত আখ থেকে লালি তৈরি করেন স্থানীয়রা। উপজেলার অর্ধশতাধিক পরিবার আখের রস থেকে লালি তৈরির কাজ করেন। প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার কেজি লালি তৈরি হয় এ অঞ্চলে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারদের মাধ্যমে বিপণন করা হয়। সরেজমিন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় মহিষ ও গরু দিয়ে আখ মাড়াইয়ের কাজ করছেন। দিনভর আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে রস সংগ্রহের পর রাতে তা জ্বাল দেওয়া হয়। দুই ঘণ্টার বেশি সময় জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি হয় সুস্বাদু লালি। বিষ্ণুপুর গ্রামের লালি তৈরির কারিগর ছিদ্দিক মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১৫ হাজার টাকায় এক কানি জমির আখ কিনেছেন। এ আখ দিয়ে যে পরিমাণ লালি হবে, তা বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হবে। সাধন মিয়া নামে আরেক কারিগর বলেন, আগে বাজারে নিয়ে লালি বিক্রি করতে হতো। এখন পাইকাররা বাড়ি এসে লালি নিয়ে যান। প্রতি বছর শীতের সময় লালির ব্যবসা করে ভালো আয় হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, আশা করছি এ মৌসুমে অন্তত ৭০ লাখ টাকার লালি বিক্রি হবে। আগে প্রচুর পরিমাণ লালি তৈরি হতো। বর্তমানে কৃষক আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে লালিও কম তৈরি হচ্ছে। কিছু কৃষক ঐতিহ্য হিসেবে আখ চাষ করছেন।

সর্বশেষ খবর