শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ঝরাপাতায় তাদের জীবন-জীবিকা

নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

ঝরাপাতায় তাদের জীবন-জীবিকা

ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে সংগ্রহ করা পাতা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাঘ থেকে চৈত্র তিন মাস টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলের গাছের পাতা ঝরে পড়ে। বর্তমানে ওই ঝরাপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে বনাঞ্চলের প্রায় ৩ হাজার পরিবার। পাতা কুড়িয়ে নেওয়ায় বনে আগুন লাগার আশঙ্কা কমছে। একদিকে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো পাচ্ছে অর্থনৈতিক সুবিধা। জানা যায়, জামালপুরের দক্ষিণাংশ, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এবং টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের বনভূমি নিয়ে মধুপুর গড় অঞ্চল গঠিত। গড় অঞ্চলের উত্তরাংশ মধুপুর গড় ও দক্ষিণাংশ ভাওয়াল গড় হিসেবে পরিচিত। টাঙ্গাইল বন বিভাগের আওতায় নয়টি রেঞ্জে ৩৪টি বিট, তিনটি সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং নয়টি সামাজিক বনায়ন কেন্দ্র রয়েছে। মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলার প্রাকৃতিক বনে সবচেয়ে বেশি শাল-গজারি ও সেগুন গাছ পাওয়া যায়। ষড়ঋতুর এ বদ্বীপে বঙ্গীয় মাঘ থেকে চৈত্র মাস এ অঞ্চলের আবহাওয়া এক প্রকার নাতিশীতোষ্ণ থাকে। শীতের পিঠা-পায়েসের পর বাঙালি হৃদয়ে বসন্ত দোলা দেয়। বনের গাছ-গাছালি পাতা ঝরিয়ে নবরূপে আত্মপ্রকাশ করে। ওই ঝরেপড়া পাতাই প্রায় ৩ হাজার পরিবারের খরচ মেটাচ্ছে। সরেজমিন মধুপুর গড়ের জয়নাগাছা, পীরগাছা, চুনিয়া, ফেকামারী, লুহুরিয়া, অরণখোলা, কামার চালাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষ ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত শাল-গজারি গাছের ঝরাপাতা সংগ্রহ করছেন। ঘোড়ার গাড়ি ও ভটভটিতে খাঁচা তৈরি করে পাতা নিচ্ছেন। সংগ্রহ করা পাতা তারা আনারস চাষিদের কাছে প্রতি গাড়ি (৮-১০ মণ) ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। মধুপুরের আনারস চাষি আবুল কালাম, মজিবুর রহমান, আবদুল লতিফ, রহমানসহ অনেকে জানান, আনারসের চারা লাগানোর পর মাটির আর্দ্রতা রক্ষা ও আগাছা গজানো রোধ করতে বনের ঝরাপাতা বিছিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় দিনমজুররা ওই পাতা বন থেকে সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করেন। আকারভেদে প্রতি গাড়ি পাতা ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। মধুপুরের দোখলা রেঞ্জ অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, বনের ঝরে পড়া পাতায় আগুন দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কাঠ চোরেরা বনের গাছ কেটে নিয়ে যায়। ঝরে পড়া পাতা সরিয়ে নিলে আগুন দিতে পারে না। তাই তারা স্থানীয়দের ঝরাপাতা সংগ্রহে উৎসাহ দেয়। টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঝরাপাতা বিক্রি করে কিছু মানুষের উপকার হচ্ছে। এটা বনে আগুন দেওয়াও নিরুৎসাহ করে।

সর্বশেষ খবর