সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

৫০ বছরেও শহীদের মর্যাদা পাননি হানাদারের হাতে নিহত ১৬ জন

জমির বেগ, ফেনী

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পার হলেও শহীদের মর্যাদা পাননি মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ফেনীর ১৬ শহীদ। ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর জেলার পরশুরাম উপজেলার মালিপাথর গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ও বেয়নেটের আঘাতে শহীদ হন এই গ্রামের ১৯ জন। সেদিনের বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের তৎকালীন শিক্ষক নূরুল আমিন বলেন, তখন ছিল শীতকাল। মাত্র আকাশে সূর্য উঠেছে। চারদিকে কুয়াশাঢাকা। অনেক মানুষ তখন ঘুমে। হঠাৎ চারদিক থেকে চিৎকারের ধ্বনি ও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। শুরু হলো রাইফেলের গর্জন। চারদিকে শুধু  চিৎকার আর কান্নাকাটি। পরে দেখলাম গ্রামের চারপাশে ঘেরাও করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের মালিপাথর গ্রামে ঢুকে নিশংসভাবে সাধারণ মানুষকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে। দিনভর তারা চালায় নির্যাতন। করে গণহত্যা আর বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ। এ সময় শহীদ হন গ্রামের ১৯ জন সাধারণ মানুষ। সেদিন গ্রামের ৪০টি পরিবারের বসত ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় হানাদার বাহিনী। তিনি বলেন, ঘটনার আগের রাতে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে হানা দিয়ে ক্ষতি সাধন করায় প্রতিশোধ হিসেবে পাকবাহিনী এই হত্যাকান্ড চালায়। সেদিনের ঘটনায় তার দাদা মুন্সি সৈয়দের রহমান, হাবিব উল্যাহ, মফিজুর রহমানসহ তাদের পরিবারের পাঁচজন ছিল। একই গ্রামের বাসিন্দা আরিফ পাঠান জানান, পাক বাহিনী চলে যাওয়ার পর পুরো গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করায় নিহত ১৯ জনকে কাফন ছাড়াই কোনোভাবে কবর দেওয়া হয়েছে।

 কিন্তু দুঃখের বিষয়, সরকারের পক্ষ থেকে এই বধ্যভূমি বা গণকবর সংরক্ষণ করা হয়নি। স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের নির্দেশনা সরকারের তরফ থেকে থাকলেও নানা কারণে তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বধ্যভূমিটি আজও সংরক্ষিত হয়নি। নিয়মিত ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করায় এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে এখানে। অন্য নিহতদের পরিবারের অভিযোগ প্রশাসন একটি ফলক লাগিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। বারবার আবেদনের পর মাত্র তিনজনকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হলেও বাকি ১৬ জনকে শহীদের মর্যাদাও দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পরশুরামের শফিকুর বাহার মজুমদার টিপু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সেদিন যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলো গণ-শহীদ। শহীদ দুই ধরনের। যারা সরাসরি অস্ত্র নিয়ে বা সরাসরি যুদ্ধ করেছে তারা হলো শহীদ। আর যাদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধরে এনে বা নির্বিচারে ধরে এনে হত্যা করেছে তারা হলো গণ-শহীদ। গণ-শহীদরাও শহীদ। তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় ভাতা পান না। তবে তারা শহীদ। কিন্তু তাদের বধ্যভূমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ অবশ্যই করতে হবে।  পরশুরাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল মজুমদার বলেন, মালিপাথর বধ্যভূমিতে কিছু উন্নয়নকাজ হয়েছে। প্রতিরক্ষা দেয়াল ও নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর