রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিস্তার ৩০ পয়েন্টে বালু তোলার মহাযজ্ঞ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তার ৩০ পয়েন্টে বালু তোলার মহাযজ্ঞ

লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর প্রায় ৩০ পয়েন্ট থেকে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু তোলার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। কারণ প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয় শত শত বসতভিটা ও ফসলি জমি। অবশ্য নদী ভাঙনরোধে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতিপয় ব্যবসায়ী তিস্তা নদী থেকে মাসের পর মাস অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছেন। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী তীরের বসবাসরত পরিবারগুলো। বালু ব্যবসায়ীদের এতটাই দাপট যে, ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ মুখ খুললে তাদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হয়। বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনও যেন এক প্রকার অসহায়। ফলে কোনোভাবেই তিস্তা নদী থেকে বালু তোলা ও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। সরেজমিন দেখা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ; আদিতমারী উপজেলার চর গোবর্ধান, কুটিরপাড় ও বালাপাড়া; কালীগঞ্জ উপজেলার চর বৈরাতি ও ভোটমারী; হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা, পারুলিয়া ও সানিয়াজান এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম এলাকায় তিস্তা থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এসব বালু তুলে ট্রাকযোগে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। চর গোকুন্ডা এলাকার বাসিন্দা মোকলেছ মিয়া বলেন, নদী থেকে বালু তোলা হয় আবার বিক্রিও হয়। কিন্তু বালু তোলা বন্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কালীগঞ্জ উপজেলার চর বৈরাতি এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, যারা বালু তুলছেন তারা সরকারদলীয় লোকজন। কে প্রতিবাদ করবে? তাদের অনেক ক্ষমতা। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো হয়রানির স্বীকার হতে হয়। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, দিনের পর দিন বালু তোলা হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন এসব জেনেও না জানার ভান করেন। কারণ যারা বালু তুলছেন তারা আওয়ামী লীগের লোক। এ জন্য নদী পাড়ের মানুষের ক্ষতি হলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। স্থানীয় কয়েকজন প্রতিনিধি জানান, যারা বালু তুলছেন তারা প্রভাবশালী। এ ছাড়া প্রশাসনের লোকজন মাঝে মাঝে পয়েন্টগুলোতে যাওয়া-আসা করেন। কিন্তু বালু তোলা বন্ধ হয়নি কোনো দিনও। সরকার তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে কাজ করলেও কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মাসের পর মাস ড্রেজার মেশিনে বালু তুলছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন বালু ব্যবসায়ীরা, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী। বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। খুনিয়াগাছ ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল বলেন, প্রশাসনকে জানানোর পর মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান করা হলেও কিছুতেই বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলার কোনো সুযোগ নেই। এসব বালু দিয়ে সিসি ব্লক তৈরি করা হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এসব বালু দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ করা যাবে না। পাটগ্রামের বালু দিয়ে এসব সিসি ব্লক তৈরি করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের আটক করা হচ্ছে। তারপরও যদি কেউ এমনটি করে থাকে, তাহলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর