শিরোনাম
শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই দশক বন্ধ মোগলহাট ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

দুই দশক বন্ধ মোগলহাট ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট

লালমনিরহাট শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে মোগলহাট। এলাকাটি শহরের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় এক সময় ট্রেন যোগাযোগ থাকলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। মোগলহাটে ছিল স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। মোগলহাট-গিতালদহ রুটে নিয়মিত আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া হতো এবং পাসপোর্টধারী যাত্রীরা চলাচল করতেন। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু ছিল ২০০২ সাল পর্যন্ত। এখনো ১১৭ শতাংশ জমির ওপর স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মিত স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু বন্ধ রয়েছে মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। তাই পুনরায় চালুর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার কারণে মোগলহাট-গিতালদহ রুটে ধরলা নদীর ওপর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে এই রুটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় স্থলবন্দরের কার্যক্রম। তবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যক্রম ২০০২ সাল পযর্ন্ত চালু ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া জেলা প্রশাসনের চিঠি থেকে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ১৫-১৭ জুলাই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান চারদেশীয় ব্যবসায়ীদের সভা অনুষ্ঠিত হয় ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে। এতে মোগলহাট-গিতালদহ রুটে স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। চার দেশের ব্যবসায়ীরা এই রুটি পুনরায় চালুর গুরুত্ব তুলে ধরেন। এই রুটটি পুনরায় চালু হলে ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় লোকজন পাবেন কর্মসংস্থানের সুযোগ। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণে বলেছিলেন, বন্ধ থাকা মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটি পুনরায় চালু করা হবে। একই বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মোগলহাটকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারত থেকে সব ধরনের মালামাল স্থল শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে আনা-নেওয়ার অনুমতি দেয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পত্র দেয়। ২০১৭ সালের ২৪ মে সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক বিজনেজ ফোরামের সভায় মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর বিষেয় আলোচনা হয়। ব্যবসায়ীদের আলোচনা ও দাবির প্রেক্ষিতে মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর জন্য ২০১৭ সালের ৩ জুন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে পত্র দেন লালমনিরহাট সদর আসনের এমপি জি এম কাদের। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালু করতে সব সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি জমি রয়েছে। এখানে এখনো অনেক স্থাপনাও রয়েছে। ‘আমরা সম্ভাবনা যাচাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে গত ১৯ আগস্ট পত্র দিয়েছি। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো আমাদের কিছুই জানায়নি,’ বলেন তিনি। ‘ধরলা নদীর ওপর ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সংস্থার অথবা নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলবে।

 তবে নৌকা দিয়ে পারাপারের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট যে কোনো সময় চালু করা যেতে পারে,’ তিনি বলেন। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, মোগলহাটে যখন স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু ছিল তখন এই এলাকাটি ছিল কর্মচাঞ্চল্য। সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। এখানে অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সচল। মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালু হলে এখানে ফিরে আসবে অর্থনৈতিক সুদিন। রক্ষা হবে মোগলহাটের ঐতিহ্য। বৃদ্ধি পাবে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারতা। লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি শেখ আবদুল হামিদ বাবু বলেন, মোগলহাট-গিতালদহ রুটটি ভারতের কোচবিহার, আসাম, আলিপুর দুয়ার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের সহজ রুট। এই রুট পুনরায় চালু হলে খুব সহজে ও কম খরচে ভারত ও ভুটান থেকে পণ্য আমদানি করা যাবে। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। ‘আমরা ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হব, তেমনি সরকারও পাবে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে কয়েক হাজার মানুষের,’ তিনি বলেন। মোগলহাট-গিতালদহ রুটটি হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি নিরাপদ রুট। ‘এ ব্যাপারে আমরা অনেক সভা করেছি। সরকারেকে পত্র দিয়েছি। আমরা শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ধরনের ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি,’ তিনি বলেন। সম্প্রতি লালমনিরহাট শহরে একটি বিদ্যালয়ের প্লাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মোগলহাট কাস্টমস চেকপোস্ট ও স্থলবন্দরটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রুট। এই রুটটি পুনরায় চালু করতে বর্তমান সরকার আন্তরিক। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখছে। ‘আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ রুটটি পুনরায় চালু করতে আমি সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক আছি,’ তিনি বলেন।

সর্বশেষ খবর