সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

লালমনিরহাটে মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

মানুষ নয়, লালমনিরহাট যেন এখন শুধু বাস, ট্রাক ও অটোরিকশাসহ সব যানবাহনের জেলা। এসব যানবাহনের জন্য জেলার মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। একই সঙ্গে ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই। আর এ দুইয়ের প্রভাবে দিন-রাত জেলাজুড়ে যানজটে নাকাল সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে খোদ পৌর মেয়র স্বপন বলেছেন, এ শহর দেখলে মনে হয় কোনো মা-বাপ নেই। সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ স্ট্যান্ড। প্রায় প্রতিটি মোড়েই দুই লেনের সড়কের দুই পাশেই একাধিক সারিতে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর সড়কের অবশিষ্ট যে অংশটুকু থাকে তাতে কোনোমতে এক সারিতে যান চালাচল করতে পারে। কিন্তু তাতেও আবার অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। রাস্তার মাঝখানে অটোরিকশা থামিয়ে দরদাম করে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ অবলীলায় করেন তারা। মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড হওয়ায় অনেক সময় পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, জেলা ও উপজেলা শহরের মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে কিছু রাজনৈতিক নেতা, ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও  শ্রমিক সংগঠনের অসাধু কিছু ব্যক্তির পকেটে যায় চাঁদার টাকা। শহরের বিডিআর রেলগেট, বাটামোড়, মিশনমোড় ও হাঁড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অবৈধ স্ট্যান্ডের দেখা মিলবে। রাস্তা দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়ে বছরের পর বছর তারা দিব্যি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। শহরের মিশনমোড় থেকে শুরু করে একটি আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর দিয়ে বয়ে চলা এ জেলার পাঁচটি উপজেলা। এ সড়কের অটোগুলো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থেকে যানজটের সৃষ্টি করে। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র অবৈধভাবে স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে।

আর পেটের তাগিদে টাকা-পয়সা দিয়ে পুলিশের লাঠির গুঁতো খেয়েও রাজনৈতিক নেতা-মাস্তানদের চাঁদার দাবিতে হুমকি-ধমকির মধ্যে আমাদের অটো চালাতে হয় বললেন একাধিক অটোচালক। আমরা তো চুরি-ডাকাতি বা চাঁদাবাজি করতে পারি না। যত জ্বালা-যন্ত্রণা সব আমাদের। লালমনিরহাট-দৈখাওয়া বাইপাস সড়ক, লালমনিরহাট-ফুলবাড়ী সড়কসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে শতাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি। রাস্তার ওপর অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে এসব যানবাহন থেকে চাঁদা নিচ্ছে  ক্ষমতাসীন দলের পরিবহন চাঁদাবাজরা। জানা গেছে, অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর মধ্যে জেলার প্রবেশদ্বার তিস্তা থেকে বুড়িমারি পর্যন্ত ৩৫ জন লাইনম্যান রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের প্রতিদিনের বেতন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এ হিসাবে এদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বছরে যার পরিমাণ ২ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এসব লাইনম্যান অটোপ্রতি দিনে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। শুধু একটি রুটে শতাধিক অটো থেকেই মাসে আদায় করা হয় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যার পরিমাণ বছরে দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এমনিভাবে বাকি তিনটি রুট থেকেও বছরে কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি জেলার কালীগঞ্জের কাকিনা থেকে রংপুরের বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় পর্যন্ত নতুন এ রুট চালু হয়েছে। এ রুটেরও পদে পদে রয়েছে টাকা তোলার লাইনম্যান। ইজিবাইক ও অটোরিকশার জেলা বা উপজেলাভিত্তিক কোনো সংগঠন না থাকায় দায়িত্বশীল কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য সচিব জহুরুল ইসলাম টিটু বলেন, এভাবে টাকা নেওয়ার কোনো বৈধতা নেই। ইজিবাইক ও অটোরিকশার মালিক-চালক  নিজে নিজে কমিটি করে চাঁদা ওঠাচ্ছে প্রতিটি স্ট্যান্ড থেকে। আমরা দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরে আনার চেষ্টা করছি। এসব মালিক-চালক যেভাবে চাঁদাবাজি করে টাকা তুলছে তা বন্ধের দাবি তাদের। কেননা এসব টাকা শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে জমা না দিয়ে তারা আত্মসাৎ করছে। জানতে চাইলে লালমনিহাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবদুল কাদের বলেন, অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি নিয়মিত। তবে বিভিন্ন জায়গায় যেসব লাইনম্যান চাঁদা তুলছেন তা ধরার বিষয় নয়। যারা মোড়ে মোড়ে লাঠি নিয়ে কাজ করেন, তাদের দৈনিক পারিশ্রমিক দিতেই এসব টাকা তোলা হয়। এটা চাঁদাবাজি বলা যাবে না বলে মনে করেন এ ট্রাফিক কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর