সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

মরে যাচ্ছে বগুড়ার নদী 

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

মরে যাচ্ছে বগুড়ার নদী 

বগুড়ায় যমুনার বুকে জেগেছে চর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ার প্রধান প্রধান নদী দিনদিন মরে যেতে বসেছে। পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, নদীর পানি দূষণ, পলি পড়ে ভরাট, নদীর বুকে চাষাবাদ, অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, ড্রেনের প্রবাহ, ময়লা-আবর্জনা ফেলা, কলকারখানার বর্জ্য ফেলাসহ নদীর দুই পাড় ইচ্ছামতো দখলের কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে। যমুনা, বাঙ্গালী ও করতোয়াসহ অন্য উপ নদীগুলো ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। জানা যায়, যমুনা নদী ৪০ বছর আগে সারিয়াকান্দি শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হতো। বর্তমানে সারিয়াকান্দি শহর হতে যমুনা নদীর দূরত্ব মাত্র কয়েক শ মিটার। খ্যাপাটে স্বভাবের বৈচিত্র্যময় এ নদীটির ইতিহাস সুপ্রাচীন। ভূতাত্ত্বিকদের ধারণা হিমালয় পর্বতমালা উত্থানের আগে যমুনা নদীর আদি নাম ছিল ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের একটি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে চীন, তিব্বত, ভুটান ও ভারতের আসামের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামের নুন খাওয়া নামকস্থানে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটি বগুড়ার শেষ সীমানা শেরপুর ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে রাজবাড়ী গিয়ে গোয়ালন্দঘাটে পদ্মার সঙ্গে মিশেছে। আন্তর্জাতিক নদী গবেষণা সংস্থার তথ্যমতে, যমুনা নদী এককালে রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়া বিভাগ সূূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় বর্ষাকালে যমুনা নদী কানায় কানায় ভরে ওঠে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এই কারণে নদীর তীর ভেঙে তলদেশে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরে যাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ কারণেই দিন দিন নদীর গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। বাঙ্গালী নদী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি হয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করেছে। ১৮৩ কিলোমিটারের বাঙ্গালী নদীতে কোনো কোনো স্থানে পানি নেই। উজানে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও বর্ষাকালে নদীর তীর ভাঙনের ফলে তলদেশে পলি জমে বাঙ্গালী নদীর নাব্য কমে যাচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় তলদেশে এখন ফসলের আবাদ হচ্ছে। তিনটি উপজেলা শহরের কোনো কোনো স্থানে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যা পানি দূষিত হয়ে কালচে রং ধারণ করেছে। এদিকে বগুড়া শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর দুই পাড় অবৈধ দখল, দালান কোঠা নির্মাণ, ফ্যাক্টরির দূষিত বর্জ্য ফেলা ও বালু উত্তোলনের কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার কারণে তৎকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে গাইবান্ধার গোাবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের খুলশিচাঁদপুর এলাকায় বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে করতোয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়।

সে সময় ওই অংশে করতোয়ার মূল স্রোত একটি শাখা নদীর মাধ্যমে বাঙালি নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এতে গোবিন্দগঞ্জ থেকে ভাটির দিকে অর্থাৎ বগুড়ার দিকে করতোয়া নদীর প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে সরু খালে পরিণত হয়। একদিকে পানি শূন্যতায় প্রবাহ বন্ধ, অন্যদিকে ভরাট আর দখলের ফলে নদীটি এখন মৃত। এ ছাড়াও জেলায় শাখা নদী রয়েছে গজারিয়া, সুখদহ, ইছামতী, নাগর, গাংনাই। খাল রয়েছে ২৫টি। বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, নদীগুলোর নাব্য কমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে ওঠে। এতে করে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দেয়। যে কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদীগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে মোট ২২৩ কিলোমিটার খনন করা হবে। এর মধ্যে করতোয়া নদী ১১৭ কিলোমিটার, সুবিল খাল ৩১ কিলোমিটার ও ইছামতী ও গজারিয়া নদী মিলিয়ে ৭৫ কিলোমিটার খননের প্রস্তাব করা হয়েছে। করতোয়া নদীর দুই পাড়ে সড়ক নির্মাণ হবে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। নির্মাণ হবে ড্রেন, পানি শোধনাগার। নদীর সীমানা যা রয়েছে তার সঙ্গে আরও কিছু নতুন পিলার বসানো হবে। সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জমি ক্রয় থাকবে ৮৩৯ কোটি টাকার। ৩৫ জন দখলদারের মধ্যে ২৮ জনকে মুক্ত করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর