রবিবার, ৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেরপুর সীমান্তে হাতির তান্ডব

নষ্ট হচ্ছে খেতের ফসল ♦ ঘটছে প্রাণহানি

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুর সীমান্তে হাতির তান্ডব

হাতি তাড়ানোর চেষ্টা গ্রামবাসীর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেরপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চল মেঘালয় ঘেঁষা শ্রীবরদি, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে হাতির তান্ডব থামছেই না। এ দ্বন্দ্বে গত এক সপ্তাহে তিনজন কৃষক হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। গত বছরের শেষ দিকে তিনটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এক যুগে অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। এদের অধিকাংশই কৃষক। আহত হয়েছেন অনেকেই। এ দ্বন্দ্বে একই সময়ে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক হাতির। ক্ষতি হয়েছে ফসল আর বাড়িঘরের। দুয়ের এ দ্বন্দ্ব কমাতে সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে পাহাড়ে বৈদ্যুতিক বেড়া (সোলার ফেনসিং) নামক প্রকল্প চালু করে কয়েক বছর আগে। তারও আগে কাঁটাযুক্ত গাছ ও নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ দ্বন্দ্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আরও বেড়েছে। এখন ধান কাটা মৌসুমে ফসল বাঁচাতে লাঠিসোঠা ও আগুনের গোলা নিয়ে রাত-দিন পাহারা বসিয়েছেন কিষাণ-কিষাণিরা। এর মধ্যেই হাতি দলবল নিয়ে ধান খেতে মেনে পড়ছে। বাধা দিলেই শুরু হচ্ছে লড়াই। পাহাড়ের মানুষজন বলছে, কয়েক বছরে হাতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। কিছুদিন ধরে হাতি কিছুই মানছে না। বাধা দিলেই উল্টো আক্রমণ করছে। বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দ্বন্দ্ব নিরসন করতে বনে হাতির জন্য প্রাকৃতিক অভয়াশ্রমই সমাধান। সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ বলছে, বৃহদাকার এ প্রাণীটি নিদেনপক্ষে দৈনিক ১৫০ কেজি খাবার খায়। কিন্তু মানুষের কারণে ওরা খাদ্য সংকটে পড়েছে। কমেছে হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। খাদ্য সংকট ও স্বাভাবিক চলাফেরায় বিপত্তি ঘটায় মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে হাতি।  শেরপুরের এককালের গভীর বনাঞ্চল এখন অনেকটা আবাসিক, আধুনিক প্রকল্প ও উর্বর চাষবাসের উত্তম ক্ষেত্র হয়ে গেছে। এসবে হাতির বসবাস ও খাবারের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বৈদ্যুতিক আলো আর গাড়ির শব্দ পাহাড়ের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সূত্র জানান, হাতির পূর্ব পুরুষ যে স্থান দিয়ে চলাফেরা করেছে বংশ পরম্পরায় সে পথ দিয়েই পরবর্তী বংশধর চলাফেরা করে। ওই পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু ইউসুফ বলেছেন, মানুষ ও হাতির এ দ্বন্দ্ব অবসানে বছরখানেক আগে এ অঞ্চলে ২২ হাজার একরের অভয়াশ্রমের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মানুষ ও হাতিকে বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে  হবে। এ বন কর্মকর্তার দাবি, শেরপুরের যে পরিমাণ বনাঞ্চল তাতে এত সংখ্যক হাতি ধারণ করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর