মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিক্ষকের বলাৎকার দেখে ফেলায় শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

শিক্ষকের বলাৎকার দেখে ফেলায় শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যা

ফরিদপুরের মধুখালীতে পৌর সদরের এক মাদরাসার শিক্ষকের বলাৎকারের ঘটনা দেখে ফেলায় সাত বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে নির্মম নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ওই মাদরাসা শিক্ষককে আটক করেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মধুখালী পৌরসভার পূর্ব গাড়াখোলা মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। মাদরাসার ওই শিক্ষকের নাম মো. হেদায়েতুল্লাহ (২৬)। তিনি পূর্ব গাড়াখোলা মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় ১৪ দিন আগে শিক্ষক (কারি) হিসেবে নিয়োগ পান। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার পীরের চর গ্রামে। নিহতের নাম ইমান আলী। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জানায়, মো. হেদায়েতুল্লাহ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কারণে আকারণে মারধর করা হতো এবং অশ্লীল আচরণ করতেন। মো. হেদায়েতুল্লাহ মারধর করাসহ শিশুদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করার বিষয়টি শিশুদের পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। বিষয়টি জানানো হয় মাদরাসার মোহাতামিম ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের। গতকাল ওই শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে বিদায় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ। মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সালাম মিয়া জানান, বাড়ি থেকে মাদরাসায় পড়তে আসা শিশু ইমান আলী ওই মাদরাসার শিক্ষকের মারধর ও অশ্লীল আচরণ ফাঁস করে দিতে পারে এ রাগের বশবতী হয়ে শিশু ইমানকে হত্যা করে।

তাকেও এভাবে হত্যা করা হবে এ ভয় দেখিয়ে ওই মাদরাসার আরেক শিক্ষার্থীকে এ কাজে সহায়তা করতে বাধ্য করেন ওই শিক্ষক। পরে হেদায়েতুল্লাহ সাহায্যকারী শিশুটিকে নিয়ে বাসে ওঠে ফরিদপুরের দিকে চলে যান। মাদরাসার অন্য শিশুদের কাছ থেকে খবর পেয়ে মাদরাসার আরেক শিক্ষক মোটরসাইকেল নিয়ে মাঝকান্দি এলাকায় বাসটি আটকে হেদায়েতুল্লাহকে এবং ওই শিশুটিকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে মধুখালী থানা পুলিশ এসে হেদায়েতুল্লাহকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। শিশু শিক্ষার্থী ইমান আলীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা মাদরাসায় ভিড় জমায়। পরে তারা মাদরাসার একটি কক্ষ থেকে ইমান আলীর লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ লাশটি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। স্থানীয়রা জানান, মাদরাসার নিয়ম অনুযায়ী ফজরের নামাজের পড় পড়াশোনা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা নাস্তা করে পড়াশোনা করে সকাল ১০টার দিকে ঘুমতে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘুম থেকে ওঠে শিশুরা আবার পড়াশোনা করে। অন্য শিশুরা ঘুমিয়ে থাকার মধ্যে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। মাদরাসার কয়েক শিক্ষার্থী ও নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে মাদরাসার এক শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকার করে শিক্ষক হেদায়েতুল্লাহ। এ ঘটনাটি দেখে ফেলে নিহত শিশু ইমান আলী। বিষয়টি সে অন্য শিক্ষকদের জানিয়ে দিলে তার ওপর ক্ষুব্দ হন হেদায়েতুল্লাহ। এ কারণে তাকে হত্যা করা হয় বলে জানান তারা। ওই মাদরাসার মোহতামিম শামসুল হক বলেন, হেদায়েতুল্লাহকে ১৪ দিন আগে মাদরাসার কারি হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে শিশুদের মারধরের ও অসৌজন্য আচরণ করার অভিযোগ ওঠে। এ জন্য তাকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিশু শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্দ স্বজন ও এলাকাবাসী মাদরাসায় গেলে মাদরাসা তালা দিয়ে শিক্ষকসহ অন্যরা পালিয়ে যান। বর্তমানে মাদরাসাটিকে কোনো শিক্ষার্থী নেই। মধুখালী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে মধুখালী থানার পুলিশ ওই মাদরাসা শিক্ষক এবং সঙ্গে নিয়ে যাওয়া শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষক হেদায়েতুল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, হত্যা ছাড়াও ওই মাদরাসার আরেকটি শিশুকে ধর্ষণ করেছেন ওই শিক্ষক। সে ব্যাপারেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর