ঢাকার চুনকুটিয়া বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক মোখলেছুর রহমান সৈকত বেলা ৪টার সময় বরিশাল নৌ-বন্দরে ভেড়ানো এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ার কারণে একটি কাজে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। শিক্ষক সৈকত বলেন, লঞ্চযাত্রা নিরাপদ ও আরামদায়ক। তাই আমি সব সময় লঞ্চে যাত্রা করি। লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় বাড়িতে এসে কাজ করে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। তার মতো খুশি বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাজলাকাঠি গ্রামের তিন সন্তানের জননী রাহিমা বেগম। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একটি ফ্যাক্টরির শ্রমিক রাহিমা বেগম গত বুধবার গ্রামের বাড়িতে এসে আটকা পড়েছিলেন। লঞ্চ চলাচল করছে শুনে বিকাল ৪টার মধ্যে এসে লঞ্চে ওঠে ডেকে বিছানা পেতেছেন তিনি। রাহিমা বলেন, স্বামী নেই। তিন সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় কাজ করে জীবিকানির্বাহ করেন। লঞ্চে আসা-যাওয়া করতে কম খরচ হয়। তাই সব সময় তিনি লঞ্চে যাওয়া-আসা করেন। বর্তমানে কারফিউ। তাই একটু তাড়াতাড়ি এসে উঠেছেন। বরিশাল সদর উপজেলার পতাং গ্রাম থেকে ছেলেকে নিয়ে আসা রাবেয়া বেগমও খুশি লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায়। ছয় দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার রাত ৯টায় বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চ। এ ছাড়াও ঝালকাঠি থেকে ভায়া রুটের এমভি সুন্দরবন-১২। ধারাবহিকতায় গতকাল শনিবার বরিশাল থেকে সরাসরি একটি ও ঝালকাঠি থেকে ভায়া রুটের আরও একটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। তিনি জানান, কারফিউর কারণে গত ২০ জুলাই থেকে বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়। কারফিউ শিথিল হওয়ায় গত তিন দিন ধরে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকার সদরঘাট রুটের লঞ্চ বন্ধ ছিল। বন্দর কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে এমভি সুন্দরবন-১৬ ও ঝালকাঠি থেকে ভায়া রুটের এমভি ফারহান-৪ লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
ঢাকা থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসবে কি না সে বিষয়ে তাকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
সরেজমিনে বরিশাল নৌ-বন্দরে ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটে তিনটি লঞ্চ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। লঞ্চের কর্মচারীরা জানান, কারফিউ থাকার কারণে যাত্রী কম। তাই একটি লঞ্চ ছাড়া হবে। যাত্রী বেশি হলে ঘাটে ভেড়ানো লঞ্চ ছেড়ে যাবে। তবে সেই সম্ভাবনা কম। এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের গিয়ে দেখা গেছে, বিকাল ৪টার মধ্যে ডেকের অনেক যাত্রী এসে চাদর বিছিয়ে শুয়ে রয়েছেন। অনেক যাত্রী এসে কেবিনের সন্ধান করছেন।
এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের কর্মচারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটি লঞ্চ ঢাকা যেতে হলে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার যাত্রীর প্রয়োজন। আসা যাওয়া করতে তেল খরচ ৮ লাখ টাকা। এ ছাড়াও আরও অন্তত ১ লাখ টাকা খরচ রয়েছে। সেই হিসাব করে লঞ্চ ছাড়তে হয়।
বিআইডব্লিউটিএ নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন জানান, ঢাকায় ৫টার পর থেকে কারফিউ শুরু। তাই ঢাকা থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসেনি। বরিশাল থেকে দুটি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি ছেড়েছে। কাল থেকে দুটি লঞ্চ ছাড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, যাত্রী কম থাকায় লোকসানের কারণে সরাসরি একটি ও ভায়া রুটের একটি লঞ্চ চলাচল করছে। রবিবার থেকে বরিশাল থেকে সরাসরি দুটি ও ভায়া রুটের একটি লঞ্চ চলাচল করবে।