বগুড়া শহরে আবারও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভাসমান দোকান, অযাচিত পার্কিং, দোকানের শেড ফুটপাতে নেওয়া, ফুটপাতে ক্রেতাদের জায়গা দাঁড়ানোর জায়গা করে দেওয়া, নির্দিষ্ট দোকান ঘরের বাইরে চেয়ার ও বেঞ্চ দিয়ে পায়ে চলার রাস্তা দখল করা, ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণ, পসরা সাজানোসহ নিয়মতান্ত্রিকহীন চলাচলের কারণে শহরে এই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বগুড়ার মূল শহরের মাঝে প্রায় সব সড়কেই যানজট লেগে থাকার কারণে সময়মতো গন্তব্যে কেউই পৌঁছাতে পারছে না। অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজগামী বাসও পড়ছে যানজটে। আর সাধারণ নাগরিকরা যানজটে পড়ে নাকাল ও দুর্ভোগে পড়ছেন। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের ট্রাফিকিং করার সময় শহরে এত যানজট ছিল না। যানজট ছাড়াই চলাচল করেছে শহরবাসী। জানা যায়, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৩ সালে বগুড়া শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সড়কগুলো বড় করেন। প্রায় ৬০ ফুট সড়ক নির্মাণ করে ডিভাইডার, সড়কবাতি, বৃক্ষরোপণ ও নির্দিষ্ট স্থানে ডাস্টবিন করেন। যেন শহরটিকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। পরে ধীরে ধীরে একজন দুজন করে লোকজন যে যেভাবে পেরেছে ফুটপাত দখল করে ফেরি করে ব্যবসা শুরু করে। শহরের মূল সড়কের পাশে নির্মাণ করা ফুটপাতটি দখল প্রক্রিয়ার মাঝে থাকায় যানজট আর কমেনি। শহরবাসী বলছেন, ভাসমান দোকান, অযাচিত পার্কিং, দোকানের শেড ফুটপাতে নেওয়া, ফুটপাতে ক্রেতাদের জায়গা দাঁড়ানোর জায়গা করে দেওয়া, নির্দিষ্ট দোকান ঘরের বাইরে চেয়ার ও বেঞ্চ দিয়ে পায়ে চলার রাস্তা দখল করা, ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণ, পসরা সাজানোসহ নিয়মতান্ত্রিকহীন চলাচলের কারণে শহরে এই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বগুড়া শহরের ফুটপাতে ভিড়, খোলা খাবার বিক্রির হিড়িক, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, রিকশা, মোটরসাইকেল রেখেছে ইচ্ছামতো। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ভিড়, ময়লার স্তূপ, ওষুধের মার্কেটের সামনে শত শত মোটরসাইকেল, ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি, নিউমার্কেট, ফতেহ আলী বাজার, চুড়িপট্টিসহ সব খানেই মানুষের ভিড়। সকাল ৯টার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত একটানা ভিড় দেখা যায় শহরে। রাস্তার এক পাশ থেকে আরেক পাশে পার হতে গেলে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। ছোট্ট শহরে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে যানজট আরও বেড়েছে। বাণিজ্যিক এই শহরে মানুষের চাপ কমছে না। নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে শহরে চাপ বাড়িয়েছে সাধারণ মানুষ। জেলা শহরের সাতমাথা, থানা রোডটি সবচেয়ে ভিড় বেশি ও ব্যস্ততা থাকছে সব সময়। বগুড়া শহরের মোটরসাইকেল, রিকশা, প্রাইভেট গাড়ি, অটো চার্জারের উপস্থিতি আগের থেকে বেড়েছে কয়েকগুণ। বগুড়া সদর থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। এখন সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত ও ভিড় থাকছে শহরের সাতমাথা, থানা রোড, বড়গোলা, বাদুড়তলা, দত্তবাড়ি, টিনপট্টি, মেরিনা মার্কেট রোড, ফতেহ আলী মোড়, রাজাবাজার রোড, নবাববাড়ী, জলেশ্বরীতলা, শেরপুর রোড, স্টেশন রোড, খান্দার সড়ক। এলাকায় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। নানা কারণে সকাল থেকেই যানবাহনসহ মানুষের ভিড় থাকে বড়গোলাসহ থানা রোডে। এই রোডের জ্যামের কারণে শহরের অন্যান্য রোডেও জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই জ্যামে পড়ে থেকে দুর্ভোগে ভুগছেন।
শহরে চলাচল করা পথচারী নবিউল আলম জানান, কয়েকদিন ছাত্ররা ট্রাফিকিং ব্যবস্থায় ছিল। তখন এত যানবাহনও ছিল না, যানজটও ছিল না। কিন্তু গত কয়েকদিন এত যানজট কীভাবে যে সৃষ্টি হলো। দ্রুত কোথাও যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। ফুটপাত দখল, ফেরি দোকানে সড়ক ভর্তি, ফুটপাত দখল থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে। মাত্র কিছু ফুটপাত দখলকারীর জন্য শহরে আসা প্রায় ৫ হাজার মানুষের প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভাসমান দোকান সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করলে এ সমস্যার সৃষ্টি হবে না।
অটোরিকশা চালক মিরাজুল ইসলাম জানান, শহরে আগের থেকে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়েছে। সড়ক ফাঁকা থাকছে না। সব সময় চলাচল করছে। এর সঙ্গে শহরের মাঝ দিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ বার ট্রেন চলাচল করে। প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট যানবাহন শহরের মাঝে চলাচল বন্ধ থাকলে যানজট বড় হয়ে যাচ্ছে।
কয়েক গজের মাঝে মূল শহরের মধ্যে তিনটি রেলগেটই একই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাতে সব দিকে চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে। আবার ট্রেন চলে যাওয়ার পর রেলগেটের ব্যারিয়ার উঠে গেলে শুরু হয় তীব্র যানজটের।