মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে মাটি ফেলে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নদীতে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাহ বন্ধ থাকায় পানিতে ময়লা-আবর্জনা জমে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, নদীর উত্তর পাড় হচ্ছে আউটপাড়া আর দক্ষিণ পাড় হচ্ছে সৈয়দপুর। দক্ষিণ পাড়ের লোকজন নদী থেকে মাটি তুলে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে চলাচল করছে। সেখান দিয়ে চলাচল করছে রিকশা, ভ্যান, হ্যালোবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন। সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা সদরের বালিয়াবিল এলাকায় মূল কালীগঙ্গা নদী থেকে এই কালীগঙ্গা শাখা নদীর উৎপত্তি। নদীটি বার্তা, সৈয়দপুর, হিজলাই কেওরজানি, রতনপুর, ও লেমুবাড়ি হয়ে পুনরায় কালীগঙ্গা মূল নদীতে মিশেছে। নদীতে এভাবে বাঁধ দেওয়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নদী তীরবর্তী এলাকার মৎস্যজীবীরা বলেন, নদীতে বাঁধ দেওয়ায় আমরা মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বেশি সময় এভাবে পানি বন্ধ থাকলে নদীর মাছ ও পানি নষ্ট হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নদীটি ধীরে ধীরে মরে যাবে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তবে এলাকাবাসী জানান, এ এলাকাটি কালীগঙ্গা নদী দ্বারা বেষ্টিত। দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর জন্য দক্ষিণ পাড়ের লোকজন সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত।
সৈয়দপুর এলাকার আবুল হোসেন বলেন, শুধু ছোট্ট একটি সেতুর জন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, কৃষকরা কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা। বেল্লাল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, সব সময় খেয়া পারে মাঝি থাকে না। ঝড়বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। এর আগে নৌকাডুবিতে চারজন মারা যায়। তিনি আরওও বলেন, একটি সেতুর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত লোকজন এ রাস্তা নির্মাণ করেছে। সরকারের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ ও নদীর বাঁধ অপসারণ করা হোক। তবে আবদুর রহমান জানান, নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। আগে নদীতে গোসল করতাম। এখন নামা যায় না, শরীর চুলকায় এবং জ¦ালাপোড়া করে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে নদীতে বাঁধ নির্মাণ করলেও কিছুই জানেন না দাবি বেতিলা-মিতরা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সুশীল চন্দ্রের। বেসরকারি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান বারসিকের জেলা সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় নদীর ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। নদী ভরাট করে এভাবে রাস্তা নির্মাণ করায় পানিপ্রবাহ থেমে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি অপসারণ করে নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা উচিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মেজবা উল সাবেরিন বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের পর সম্প্রতি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নদীর বাঁধ সরিয়ে নদী অবমুক্ত করতে এলাকাবাসীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাটি অপসারণ না করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ। বাঁধ অপসারণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।