বর্ষা মৌসুম পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই লালমনিরহাট জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার হাতিবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩২টি পয়েন্টে নদীভাঙন শুরু হয়েছে, জানান স্থানীয়রা। নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি, বাড়িঘর। ৭ দিনে এ দুটি নদীর ভাঙনে ৮টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে, জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায়। এ সময়ে ভাঙন দেখা দেওয়ায় নদীপারের বাসিন্দারা চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিনারী গ্রামের কৃষক শফিয়ার রহমান (৪৫) জানান, কয়েক দিন ধরে নিয়মিত ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে ভারত থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত পানি যোগ হয়ে তিস্তায় হঠাৎ পানি বেড়ে যায়। এতে চরের জমিতে আমার ধান আর ভুট্টা পানিতে তলিয়ে গেছে। এরপর পানি কমতে শুরু করায় নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে। অনেক কৃষক চোখের সামনে জমি হারাচ্ছেন।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চন্ডিমারী এলাকার তরুণ কৃষক বকুল (২৭) জানান, এ সময়ে তিস্তার এমন ভাঙন কখনো দেখিনি। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমরা শুধু জমিই হারাচ্ছি না, জীবিকা হারাচ্ছি, ভবিষ্যৎ হারাচ্ছি। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মধ্য হরিণচওড়া গ্রামের কৃষক সাহেব আলী (৫৫) বলেন, এক সপ্তাহে আমার প্রায় এক বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। এ এলাকায় অন্তত আরও ১২ কৃষক জমি হারিয়েছেন। চোখের সামনে সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে অথচ কিছুই করতে পারছি না।
খুনিয়াগাছ ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল জানান, ১৫ দিন ধরে তার ইউনিয়নের কালমাটি এলাকায় তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহে দুই একর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় বলেন, তিস্তার বেশ কিছু পয়েন্টে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ধরলার মোগলহাট এলাকায়ও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। আমরা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিস্তার হরিণচওড়া ও আশপাশের এলাকায় ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এবারও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তুতি বা আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিস্তাপারের মানুষ। টেকসই বাঁধ নির্মাণ, কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ক্ষতিপূরণের উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাবে বছর বছর এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারো কৃষক পরিবারকে।