লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় গবাদি পশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। গত ১৫ দিনে এ রোগে ৪০টি গরু মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক-খামারিরা। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখন পর্যন্ত লাম্পি স্কিনে ৩০-৩৫টি গরু মারা যাওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। জেলায় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে আরও বেশি গরু। চিকিৎসায় অনেক গরু সুস্থ হচ্ছে। আমরা আক্রান্তের খবর পেলে ওইসব এলাকায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করি।
তথ্যমতে, এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদি পশুতে এই রোগ দেখা দেয়। এতে গরুর চামড়ার উপরিভাগে শরীরজুড়ে গোটা সৃষ্টি হয়। সাধারণত তীব্র গরম আর মশা-মাছির মাধ্যমে এই রোগ গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। দুধ ও লালার মাধ্যমেও এটি আক্রান্ত গরু বা মহিষ থেকে বাছুরে ছড়াতে পারে। এর চিকিৎসায় এখনো সুনির্দিষ্ট টিকা আমাদের দেশে আসেনি। কালিগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ রুহুল আমিন নয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এই রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্তের খবর আসছে। ওই ইউনিয়নের শিয়াল খোওয়া গ্রামের মোতালেব, কামাল ও বাবলুর রহমান বলেন, এই রোগে তাদের এলাকায় ১০-১৫ দিনে সাতটা গরু মারা গেছে। চিকিৎসা করিয়েও লাভ হচ্ছে না। অসংখ্য গরু আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খোঁজখবর নেন না। কাকিনা পাঁচমাথা এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২০ দিন ধরে দুটি গরু এই রোগে আক্রান্ত। অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করেও ভালো হচ্ছে না। এখন আর চিকিৎসা করছি না। গরুর খুরে ঘা হয়েছে। হলুদ দিয়া রাখছি। হতিবান্ধার গড্ডিমারি এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, ১৫ দিনে তার দুটি গরু লাম্পি স্কিনে মারা গেছে। আক্রান্ত গরুকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের কাছে না এসে গ্রামের চিকিৎসক কিংবা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের গরু মারা গেছে।’ তিনি জানান, অনেকে এই রোগে আক্রান্ত গরুকে ব্যথার ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে আক্রান্ত পশু আরও দুর্বল হয়ে মারা যাচ্ছে। এই প্রাণী চিকিৎসক বলেন, এ রোগ প্রতিরোধে আমরা ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আর আক্রান্ত পশুর জন্য লক্ষণভিত্তিক সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। গরমের তীব্রতা কমে গেলে এমনিতেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে আসবে।