দখলদারদের কবলে পড়ে নীলফামারীর বুক চিরে বয়ে চলা বামনডাঙ্গা নদী এখন নালায় পরিণত হয়েছে। চিরচেনা রূপ হারিয়ে পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। হয়ে গেছে মশা-মাছির কারখানা। ভরে গেছে কচুরিপানায়। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। এক সময়ের আশীর্বাদ এ নদী এখন তীরবাসীর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, বামনডাঙ্গা নদীতে প্রাচীনকাল থেকে বাণিজ্যিক নৌ চলাচল করত। নীলফামারী কৃষি খামার থেকে সিংদই পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল শাঁখামাচা বন্দর। ওই বন্দর এখন নীলফামারী শহর। দখলবাজরা নদীটিকে মৃত নালায় পরিণত করেছে। কোথাও ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ। শহরের অনেক ড্রেনের লাইন দেওয়া হয়েছে এ নদীতে। এতে নদী পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। মশা-মাছির কারখানা হয়ে গেছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দেড় দশকে নীলফামারী শহরের দালান-কোটা, রাস্তা-ঘাটের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। অনেকস্থান দখলদাররা তাদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। অনেক জায়গা ডারা, নালা, ভিটা হিসেবে খাস খতিয়ানে নথিভুক্ত হয়েছে। ব্যক্তি দখলদারদের পাশাপাশি সরকারি বিএডিসি, পৌরসভার বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে এ নদীর জায়গায়। আনন্দবাবুর পুল এলাকার সুজা মির্ধা বলেন, এ নদীতে দেবী চৌধুরানীর বজরা চলত। বাণিজ্যিক নৌযানের আনাগোনা ছিল নিয়মিত। অনেকে নিজের নামেই রেকর্ড করেছে নদীটি। চারদিকে নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। মাস্টারপাড়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এ নদী। কিন্তু দখলবাজদের কারণে পানি বের হতে পারে না। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালে বামনডাঙ্গা নদীর সাত কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালীদের দখল আর সীমানা জটিলতায় নদী খনন কাজ থেমে যায়। এ সময় মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ খনন কাজ করা সম্ভব হয়েছিল।
পরে ২০২০ সালে নীলফামারী জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দখলদারদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাগুজে-কলমে বামনডাঙ্গা নদীর নামে শ্রেণি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। খুব শিগগিরই এ কাজ হাতে নেওয়া হবে।