জেলার সদর উপজেলার আমিরপুর গ্রামে ৮ জুলাই অরক্ষিত রেলগেটে ট্রেনে কেটে মারা যান জীবন মণ্ডল নামে এক যুবক। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে রেলগেট পার হওয়ার সময় আপ লাইনে ট্রেন আসতে দেখে অপেক্ষা করেন। সেটি চলে গেলে রেললাইন পার হতে গিয়ে ডাউন লাইনে আসা অপর ট্রেনে কাটা পড়েন তিনি। এসব অরক্ষিত রেলগেট মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে প্রাণহানি। চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থানে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। যত্রতত্র অরক্ষিত রেলগেট ও গেটম্যানের স্বল্পতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হচ্ছে- বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, রেলগেটে প্রয়োজনীয় লোকবল ও চলাচলকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে কমবে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ রয়েছে। এ পথে ৩০টি রেলগেট আছে। এর ১৫টিতে কোনো গেটম্যান নেই। এ ছাড়া আরও ২৫টি স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে এলাকাবাসী চলাচল করে।
স্থানীয়রা জানান, আপ লাইনে চলা ট্রেনের কারণে ডাউন লাইনের ট্রেন অনেক সময় দেখা যায় না। এ কারণেই ৮ জুলাই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান জীবন ম ল। এর আগে ৫ জুলাই রাতে আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বেদবাড়ি এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে ওয়াদুদ হোসেন ও ১৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ঘোড়ামারা ব্রিজের অদূরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, কর্তৃপক্ষ অরক্ষিত রেলগেটগুলোতে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দায় সেরেছে। দীর্ঘদিন এসব রেলগেট অরক্ষিত রয়েছে। বছরের পর বছর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। গেটম্যান ও গেট না থাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচল করছে পথচারী, ছোট-বড় যানবাহন ও বিভিন্ন প্রাণী। অনেক গেটে পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন স্থানীয় দোকানি ও সাধারণ মানুষ। ট্রেন আসা দেখলেই তারা পথচারীদের সতর্ক করেন ও নিরাপত্তার স্বার্থে গেটের কাছে এসে সাবধানে যাতায়াতের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ জগদীশ চন্দ্র বসু জানান, চলতি বছর ৭ মাসে চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ৯ জন। পুলিশ প্রতিটি ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, মানুষ সহজে হেঁটে চলাচলের জন্য রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে। এ ছাড়া রেলগেটে লোকবল সংকট রয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। গেটম্যান পেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।