ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন হাওড়বেষ্টিত। মেঘনার পুবপারে এর অবস্থান। ওপারে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাঙালপাড়া ইউনিয়ন। মাঝখানে মেঘনার শাখা চিকনদিয়া ও কাইঞ্চার খাল। বছরের অর্ধেক এখানকার মানুষ নৌকায় চলাচল করে। এ দুটি খালের পানিতে সেচ দেওয়া হতো এলাকার প্রায় ১৯ হাজার বিঘা জমিতে। কিন্তু এখন খাল পলিতে ভরাট। ফলে পানি সেচ নিয়ে বোরো মৌসুমে দুশ্চিন্তায় পড়েছে হাজারো কৃষক। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ১৯ হাজার বিঘা জমি আবাদ।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, কাইঞ্চার খালের পানিতে গোয়ালনগর, নোয়াগাঁও, মাছমা, আশানগর, দক্ষিণদিয়া ও রামপুর গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা জমি সেচ দেওয়া হয়। চিকনদিয়া খালের পানিতে সোনাতলা, ঝামারবালি, কদমতলী ও মাইজখলা গ্রামের প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমি সেচ দেওয়া হয়। চলতি বোরো মৌসুমে খাল দুটিতে পানি না থাকলে এসব জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন জানান, গোয়ালনগর ইউনিয়নে এ বছর ১৬ হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খাল দুটির নাব্য না ফিরলে ১০ থেকে ১৪ হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থেকে যেতে পারে। এতে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার মণ ধান উৎপাদন কম হবে। স্থানীয়দের ভাষায়, মেঘনা নিজের পথ হারিয়েছে। গত এক দশকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে নির্বিচার বালু তোলায় নদীর প্রবাহ সরে গেছে। ফলে চিকনদিয়া আর কাইঞ্চার খালের মুখে জমেছে পলি, বন্ধ হয়ে গেছে প্রবাহ। স্থানীয় কৃষক বলছেন, নভেম্বরের মধ্যে খাল দুটি খনন না করলে এক ফসলি হিসেবে পরিচিত গোটা হাওড়াঞ্চলে ধান আবাদ সম্ভব হবে না। গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘এ এলাকার কৃষকের পক্ষ থেকে কয়েক বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সাড়া দেয়নি, মাঠেও আসেনি।’ তিনিও বছরের পর বছর পাউবো ও বিএডিসি অফিসে ঘুরেছেন জানিয়ে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের বারবার জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। গত বছর অর্ধেক জমি অনাবাদি ছিল, এ বছর সবই অনাবাদি থেকে যাবে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৩০ ফুট প্রস্থ চিকনদিয়া খাল খননের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই বরাদ্দের বিপরীতে কোনো কাজ হয়নি; বরং বরাদ্দের টাকা ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে গেছে। গোয়ালনগর থেকে আশানগর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ কাইঞ্চার খাল পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও চরও উঠেছে। একইভাবে সোনাতলা থেকে ঝামারবালি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার চিকনদিয়া খালও প্রায় শুকিয়ে গেছে। প্রবাহ নেই বললেই চলে। এখন মাঠে চাষিরা চারা রোপণ বা পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু মাঠজুড়ে নীরবতা, কোথাও চাষাবাদের কোনো চিহ্ন নেই। নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সঞ্জীব দাস বলেন, ‘কাইঞ্চার খালে পানি না থাকলে ধান চাষ হয় না, মাছও পাওয়া যায় না।’ গোয়ালনগর গ্রামের ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর অন্তত ১৪ হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা সম্ভব হবে না। ১০ থেকে ১২ হাজার কৃষক পরিবার এ ফসলের ওপর নির্ভরশীল।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগগিরই এর সমাধান হবে, আশা করছি।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকাশ দত্ত বলেন, ‘বরাদ্দ পাওয়া গেলে খননকাজ শুরু করা হবে।’