নেত্রকোনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুরের র ঘটনা ঘটেছে। এসময় কর্তব্যরত দুই সাংবাদিক আহত হন। এদের মধ্যে গুরতর আহত প্রথম আলোর সাংবাদিক পল্লব চক্রবর্তীকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় পাবলিক হল মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রথম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়। মোক্তারপাড়া পাবলিক হল চত্তরে জাতীয় সংগীত গেয়ে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কামরুন্নেছা আশরাফ দীনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এমপি। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আসমা জেরিন ঝুমু। এছাড়াও সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগরে সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক প্রবীন রাজনীতিবিদ মতিয়র রহমান খান, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কামরুন্নেছা মান্নান। এছাড়া মঞ্চে ছিলেন পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নূর খান মিঠু এবং সাবেক পৌর মেয়র ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায়।
প্রথম অধিবেশন শেষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি আসমা জেরিন ঝুমু জেলা মহিলালীগ সভাপতি বর্তমান আহ্বায়ক কামরুন্নেছা আশরাফ দীনার নাম ঘোষণা করেন। সাধারণ সম্পাদক হাবিবা রহমান শেফালী, যুগ্ম সম্পাদক আয়শা খানম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তারের নাম ঘোষণা করেন। এসময়ই জেলা কমিটির নাম ঘোষনাকালেই মঞ্চের সামনে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হাতাহাতি ও চেয়ার ভাঙচুরকালে উদ্ভট পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে আসা কেন্দ্রীয় নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম থেকে আসা নারীরা ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয় নেন। এসময় কর্তব্য পালনরত সাংবাদিকদের ধাওয়া করে প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি পল্লব চক্রবর্তীর উপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় জেলার প্রবীন সাংবাদিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল আহত হন। গুরতর আহত পল্লব চক্রবর্তীকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনার পরপরই জেলা প্রেসক্লাবে উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ আবু নাসের দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে আহত সাংবাদিকের খোঁজ খবর নেন।
এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, 'মন্ত্রী পরিবারের রাজত্ব কায়েম চলছে এখানে। সবকিছু তাদের মতেই হবে। আজকে তাদের হাত থেকে জেলার বিভিন্ন গ্রাম উপজেলা থেকে আসা নারী এমনকি কেন্দ্রীয় নারী নেত্রীরাও রেহাই পান নি। তারাও লাঞ্চিত হয়েছেন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবশেনকালে সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হয়েছেন। এটি বড়ই দুঃখজনক।'
সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনের প্রাক্কালে উদ্বোধক মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি বলেন, 'আপনারা যা করছেন আমি মনে করি বর্ষিয়ান নেতারা আছেন তারা তাদেরকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া উচিত। আপনাদের এখানে এসেছি, আমাদেরকে সম্মেলন করতে দিন। আমরা পরে বসে আলোচনা করবো। প্রয়োজন হলে আমরা এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী আসলে দেখা করবো। কিন্তু এইভাবে যদি আপনারা প্রকাশ্যে হইচই করেন তাহলে ভবিষ্যতে কোন মহিলা কিন্তু আর আপনাদের সংগঠনে নেত্রকোনায় আসবে না। এই প্রথম আপনাদের সম্মেলন। এই প্রথম মহিলারা আসছে, তাদের যদি আপনারা ভয় দেখান তাহলে আগামীতে ইলেকশনে মহিলাদের ভোট পান কিনা সন্দেহ আছে। আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যেহেতু আমরা অনুষ্ঠানে আসছি স্বসম্মানে আমরা অনুষ্ঠান করে চলে যাই। হট্টগোল করলে এটা আরও বাড়বে।' এরপর উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এসেই মাইক নিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে বলেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল
