দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরী করে বেকার যুবকদের পাশাপাশি সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা এনেছেন গ্রামের গৃহবধূরা। ভাগ্যবদল হয়েছে বেকার যুবক নুর ইসলামসহ ৩০জন গৃহবধু। আর এ কারণে কৃষকদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিষ মুক্ত এ জৈব সারের ব্যবহার।
কৃষকরা বলছেন, বাজারের রাসয়নিক সারের চেয়ে জৈব সার জমিতে ব্যবহার করলে, উর্বর শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলনও বৃদ্ধি পায়। আর রাসয়নিক সারের চেয়ে জৈব সার বাজারে অনেক কম দামে পাওয়া যায়, এজন্য উৎপাদন খরচও কমে গেছে। ফলে এটি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। জৈব সার ব্যবহার করলে আর কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। আলু, ধান, আম-লিচুসহ সব ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করা যায় এই সার।
জৈব সার তৈরীকারক ফুলবাড়ীর উত্তর সুজাপুর গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, পঞ্চগড় হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ড থেকে গত ছয় মাস আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরী করা শুরু করেন। এখন প্রতি মাসে এ সার বিক্রি করে আয় করেন ২০ হাজার টাকা। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তার এই আয় বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ হাজার টাকা হবে।
একই কথা বলেন, পশ্চিম গৌরী পাড়া গ্রামের শাকিল আলম। সেও একই সাথে প্রশিক্ষণ নিয়ে গত তিন মাস থেকে সার তৈরী করতে শুরু করেছেন। এখন তার মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা।
এদিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে গ্রামের ৩০জন গৃহবধূকে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়েছে এ দু’জন যুবক। এখন গৃহবধূরাও সার তৈরী করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। এর প্রসারও বাড়ছে দিন দিন।
ফুলবাড়ীর শিবনগর ইউপির পুর্ব জাফরপুর ঘুঘুজান গ্রামের গৃহবধূ ফেরদৌসী বেগম মাত্র ১৫শ' টাকার কেঁচো নিয়ে জৈব সার তৈরী শুরু করেন। ছয় মাসের ব্যবধানে এখন তার মাসিক আয় ১০হাজার টাকা।
একই কথা বলেন, উত্তর সুজাপুর গ্রামের আক্তারা বেগম, ইসমত আরা বেগম ও মঞ্জিলা বেগম তিন বোন। এই জৈব সার তৈরী করে বিক্রি করায় এখন তারা সাবলম্বী।
জৈব সার প্রস্তুতকারক নুর ইসলাম বলেন, শুধু গোবর আর কেঁচো একটি রিং এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ দিন রাখতে হয়। কেঁচোগুলো গোবর খেয়ে যে মল ছাড়ে সেগুলো জৈব সার হিসেবে তৈরী হয়। এ কেচোগুলো বিশেষ জাতের কেচো। যা বাজারে কেজি দরে কিনতে পাওয়া যায়।
জৈব সার ব্যবহারকারী পূর্ব রাজারামপুর ঘাটপাড়া গ্রামের পাপ্পু বলেন, সে আলু ক্ষেতে জৈব সার ব্যবহার করে দ্বিগুন ফসল পেয়েছেন। একই কথা জানান, ভেটাই গ্রামের ইমান আলী, মাদিলা হাট এলাকার জিয়াবুর রহমান ও আমতলী এলাকার লিটন।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিম আশরাফ বলেন, এখন বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন করতে হলে জৈব সার ব্যবহার করার বিকল্প নাই। এজন্য জৈব্য সার ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি।
বিডি প্রতিদিন/০৬ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল