ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের এম এম পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রধান শিক্ষককে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরিটি (জিডি) বাধ্য হয়ে প্রত্যাহার করে নিলেন নির্যাতিত শিক্ষক ফজলুল হক আকন। রাজাপুর থানার বহুল আলোচিত-বিতর্কিত ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াসের গালাগাল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকির যৌথ চাপে নির্যাতিত প্রধান শিক্ষক নিরুপায় হয়ে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মহান তার অনুমতি না নিয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্কুল মাঠে অনুষ্ঠান করতে দেয়ার অপরাধে মাঠে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক আকনকে গত রবিবার শারীরিক নির্যাতন-মারধর করে। এঘটনার প্রতিবাদে পরের দিন সোমবার সকালে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বরিশাল-ঝালকাঠি-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় দুঘন্টা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। বিষয়টি মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হলে ঘটনাটি ঝালকাঠি জেলা জুড়ে ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক আকন রাজাপুর থানায় একটি জিডি দায়ের করায় পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের নেতা হুমায়ুন কবিরকে আটক করে।
প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক আকন জানান, ‘আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবিরকে আটক করে মঙ্গলবার দুপুরে থানায় নেওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বিকেল থেকে মোবাইল ফোনে সহ লোক পাঠিয়ে নানাভাবে আমাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি অনেকটা বাধ্য হয়ে থানায় যাই। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথেই ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বকাঝকা শুরু করলে আমি হতবাক হয়ে যাই। এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগ প্রভাবশালী কতিপয় নেতাও আমার ওপর নানাভাবে ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করলে আমি মানসিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। এসময় থানায় উপস্থিত পুলিশ-আ’লীগ নেতা সবাই আমাকে জিডি প্রত্যাহারের জন্য চাপাচাপি শুরু করলে ‘জিডি প্রত্যাহার করে চলে আসি।’
লাঞ্ছিত শিক্ষক আরও বলেন, এলাকার অসংখ্য মানুষের সামনে আমাকে যেভাবে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত (ঘুষি আর থাপ্পড়) করা হলো সেটা কিছুই নয় বরং অভিযোগ তুলে নেয়ার সময় রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস আমাকে ওই ঘটনার পর ছাত্রদের নিয়ে নাকি আন্দোলন করিয়ে বিষয়টি ঘোলাটে করেছি বলে উল্টো অভিযুক্ত করার তৎপরতা চালান।’
এ ব্যাপারে রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস সাংবাদিকদের জানায়, মঙ্গলবার উক্ত শিক্ষক তার অভিযোগটি স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছেন। এতে কোনো চাপ বা হুমকি দেওয়ার বিষয় ছিল না। কারণ মার খাওয়া শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা দুজনে একই দলের অনুসারী। তাই বিষয়টি স্থানীয় স্থানীয় ভাবে মীমাংসা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আটক হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান,‘এটা নিছক ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে থানায় বসে ওসি সাহেব, সাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতারাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার