বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের জীববৈচিত্র্যে সুরক্ষাসহ অরণ্যে আগুন দস্যুতা ঠেকাতে বন সন্নিহিত লোকালয় জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ কাজ ১১ মাসেও শুরু হয়নি। একই সাথে সুন্দরবনের এই দুটি রেঞ্জের ভরাট হয়ে যাওয়া খালসহ মিঠা পানির মাছের খনিখ্যাত ছোট-বড় ৩৫টি বিলে একাধিক পুকুর খননের নেই কোন উদ্যোগ। গত বছরে মাত্র এক মাসের মধ্যে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশনের গহীন অরণ্য নাশকতার আগুনে পুড়ে ছাই হবার পর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং তৎকালিন প্রধান বনসংরক্ষক মো. ইউনুস আলী সুন্দরবনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরপরই এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিদের্শ দিলেও আজও তা প্রকল্প অনুমোদন পায়নি। সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় জরুরি এসব প্রকল্প এখনো ফাইল বন্ধি হয়ে পড়ে রয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মংলা উপজেলার বনসন্নিহিত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়াসহ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও ৩৫ বিলে একাধিক পুকুর খনন প্রকল্প গত ১১ মাসেও অনুমোদন পায়নি। খোদ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং তৎকালিন প্রধান বনসংরক্ষকের নির্দেশিত এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিলো, চাঁদপাই রেঞ্জের বৈদ্যমারীর লোকালয় থেকে থেকে শুরু করে কাটাকালী- বরুইতলা- জিউধরা- আমুরবুনিয়া- গুলিশাখালী- কলমতেজী ও ধানশাগর ষ্টেশন থেকে নাংলী টহল ফাড়ী পর্যন্তওয়াচ টাওয়ারসহ কাটাতারের বেড়া নির্মাণ। একই সাথে চাঁদপাই রেঞ্জের পরিকল্পিত ভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অবৈধ্য উপায়ে মিঠা পানির মাছ চাষ ও আহরণ চীরতরে বন্ধে ছোট-বড় ২৩টি বিলের প্রতিটিতে এক বা একাধিক পুকুর খনন। খনন করা পুকুরের মাটি দিয়ে অবশিষ্ট বিল ভরাট করে সেখানে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনায়ন করা। যাতে করে সুন্দরবনে আর কোন বিলের অস্তিত্ব বিল্পপ্ত করে অবৈধ উপায়ে মিঠা পানির মাছ চাষ বন্ধ করা। একই সাথে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীর চাহিদা মিটাবে খননকৃত ওইসব পুকুরের মিঠা পানি।
গত বছরের ২৭ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিলের পর্যন্ত মাত্র এক মাসে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশনভূক্ত নাংলির পচাকোড়ালিয়া, টেংরা ও তুলাতলা বিলের মিঠা পানির মাছ আহরণ ও জাল পাতার স্থানসমুহ পরিস্কার করতে র্দুবৃত্তরা গহীন বনে চার দফায় পরিকল্পিত ভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২০০২ সালের ২২ মার্চ ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড কটকা অভয়ারণ্যের প্রায় ১৫দিন ধরে জ্বলতে থাকা আগুনের মধ্য দিয়ে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় বনে শুরু হয় অগ্নিকান্ডের ঘটনা। পরিকল্পিত ভাবে এসব আগুন লাগানো দুষ্কর্মের সাথে জড়িত আপরাধীরা সব সময় থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ নিয়ে ১৪ বছরে ২২ বার আগুনে পুড়ে ছাঁই হয় সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা। গত বছরে সুন্দরবনে চারদফা নাশকতার আগুনে ঘটনার পর আগুন দস্যুদের ঠেকাতে দ্রুত বন সন্নিহিত লোকালয় জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ এবং ভরাট হয়ে যাওয়া খালসহ মিঠা পানির মাছের খনিখ্যাত ছোট-বড় ৩৫টি বিলে একাধিক পুকুর খননের ঘোষণা দেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং তৎকালিন প্রধান বনসংরক্ষক মো. ইউনুস আলী।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার