ডিঙ্গাপোতা হাওরের হাজার হাজার কৃষকের শ্রম ভেসে গেছে বানের জলে। যে যেমন পারছেন নৌকা তৈরি করে ভাসমান কিছু ধান তুলে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। নিজেরা খেতে না পারলেও গরুগুলো যেন কয়েকটা দিন খেতে পারে সেই আশায়।বন্যার পানির কারণে বেকার হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।বেড়ে যাচ্ছে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য।
তেতুলিয়া এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ধানগুলো থাকলে শুধু কৃষক না, বাঁচতো শ্রমিকরাও। এখন আর ধান নেই। কৃষি শ্রমিকেরও কাজ নেই। এ অঞ্চলের সকল ধরনের মানুষই বেকার। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সব স্বপ্ন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রতি বছর চর হাইজদা বাঁধের একই অংশ ভাঙ্গে। কেন তারপরও এই জায়গার নামে বরাদ্দ অর্থ কাজে লাগানো হয়নি তা এখানকার কেউ জানেন না।
তেতুলিয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই জালাল পয়েন্টে নামকাওয়াস্তে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সামান্য পানির তোড়ে তা আবার ভেঙ্গেও যায়। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে কৃষকদের দুর্দশা কখনও শেষ হবে না।
এ বছর নেত্রকোনায় ২৮০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতের জন্য প্রায় পৌনে নয় কোটি টাকা বরাদ্ধ আসে। এর মধ্যে ঠিকাদারের মাধ্যমে ছয় কোটি টাকার এবং পি আইসির মাধ্যমে দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় এক লাখ ৮৪ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও শুধু হাওর অঞ্চলেই আবাদ হয়েছিল ৪০ হাজার ৬২০ হেক্টর জমি। গত বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৩৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মোহনগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খবর দেয় চরহাইজদা বাঁধসহ কয়েকটি বাঁধ আশঙ্কাজনক। আমরা সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনিও রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছেন। এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে বার বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে বা মার্চের প্রথম দিকেও কাজটা শেষ হলে এতটা ক্ষতি হয়তো হতো না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের জানান, কমিটি গঠন হয় উপজেলা থেকে। এমপির মনোনীতকরা থাকেন সে সকল কমিটিতে। আমি চিঠি পাওয়া মাত্রই কার্যাদেশ দিয়েছি। কাজে কোনো গাফিলতি ছিল না।
বিডি প্রতিদিন/৭ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা