‘ইমন আমার বাবার পায়ের রগ কেটে ও নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি বাবার হত্যাকারীর গ্রেফতার ও শাস্তি চাই’ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ট্রাক চালক উৎপল রঞ্জন ভদ্র ওরফে সজিবের মেয়ে ছোট্ট শিশু সানজিদা আকতার চৈতি সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন দাবি জানান। এ সময় আদালতে মামলা দায়েরের দেড় মাস পরও আসামিদের গ্রেফতার তো দূরের কথা আদালতে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন না দেয়ায় নিহত সজিবের স্ত্রী-মা-বাবা ও বোন চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেন প্রতিদিনের সিরাজগঞ্জ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উৎপলের দুই শিশু কন্যা সানজিদা আফরিন চৈত্র, সামিদা আফরিন যুথি, স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, বাবা বাবলু চন্দ্র ভদ্র, মা স্বপ্না রানী ভদ্র, বোন বনা রানী ও তাপসী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উৎপলের মা স্বপ্না রানী ভদ্র বলেন, ট্রাকের লোড-আনলোড নিয়ে উপজেলা নয়নগাঁতী গ্রামের বাসিন্দা ও উল্লাপাড়ার আমান ফিডের ট্রাকের দালাল গ্রুপের প্রধান রোস্তম ও তার ছেলে ইমন, ইমরান ও আসলামের সাথে উৎপলের দ্বন্দ্ব ছিল। জুন মাসের ২৪ তারিখে ইমন ওয়ারড্রপ কেনার কথা বলে কৌশলে উৎপলকে বগুড়ায় নিয়ে যায়। ফেরার পথে চান্দাইকোনার কাছে পায়ের রগ কেটে ও পা ভেঙে নির্মম নির্যাতন করে মাইক্রোবাসযোগে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। রাত ১২টায় অন্যের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে চান্দাইকোনা হাসপাতালে গিয়ে উৎপলকে নিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভোরে উৎপল মারা যায়। বগুড়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরুতহাল প্রতিবেদন করে লাশ ময়নাতদন্ত করেন। সুরুতহাল প্রতিবেদনে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম এবং দু'পায়ের হাঁটু থেকে পাতা পর্যন্ত ভাঙাসহ হত্যাজনিতকাণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে।
উৎপলের বড় বোন বনা রানী, ভাই নন্দ রঞ্জন, বোন জামাই গোপাল চন্দ্র সরকার ও স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা জানান, মৃত্যুর আগে উৎপল বলে গেছে ইমন ও তার সহযোগীরা তাকে মারপিট করেছে। পুলিশের সুরুতহাল প্রতিবেদন নিয়ে মৃত্যুর পর উল্লাপাড়া থানায় মামলা করতে গেলে ওসি দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বিষয়টি দুর্ঘটনায় বলে আখ্যায়িত করে উল্টো আমাদের গালমন্দ করে থানা থেকে বের করে দেয়। বাধ্য হয়ে কোর্টে মামলা দায়ের করা হলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে উল্লাপাড়ার থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও কোন তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। ইতোমধ্যে আদালতও ওসিকে কারণ দর্শানোর জন্য বলেছে। তারপরেও ওসি অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আসামিদের সাথে ওসির সুসম্পর্কের কারণেই ওসি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নানা তালবাহানা করছে। এ অবস্থায় মামলাটি সিআইডি-পিবিআই এর মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানান স্বজনরা।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কৌশিক আহমেদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে উৎপল সড়ক দুর্ঘটনা মারা গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া স্পষ্ট করে কিছু বলতে পাচ্ছি না। ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি পেলে অধিকতর তদন্ত শেষে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১০ আগস্ট, ২০১৭/মাহবুব