বগুড়ায় যমুনা নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়ে বিপদ সীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। জেলার তিনটি উপজেলার ৮১টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে জেলায় বন্যায় সাড়ে ১৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় নতুন করে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। বাঙ্গালী নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম না করলেও যমুনা নদীর পানি রবিবার ৫৪ সে.মিটার থেকে বেড়ে ওঠে সোমবার বিপদ সীমার ৮৫ সে.মিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৫৮টি গ্রামের লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় ৫১০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হাটশেপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি চোওয়াতে থাকলে সেখানে বালির বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও যমনুার তীব্র স্রোতের কারণে বয়রাকান্দি গ্রামে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের যাতে কোন ক্ষতিসাধন না হয় এজন্য সার্বক্ষনিক পাউবোর কর্মকর্তারা মনিটরিং করছে।
বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম মো. আবু হেনা জানান, বগুড়ার ধুনটে ১৪টি গ্রামে যমুনা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। ২ হাজার ২৪০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই উপজেলায় রোপা আপন, বীজতলা ও শাক-সবজিসহ প্রায় ১৩০ হেক্টর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোনাতলা উপজেলায় ২৫টি গ্রামের ৪ হাজার ৮৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলায় ৮১টি গ্রামের সাড়ে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এ পর্যন্ত বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে ২ হাজার ৭১০ টি পরিবার। বাকিরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছে। দেড় হাজার ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যা এলাকায় ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮টি মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ১টি পানিতে তলিয়ে আছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, জানান উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৫৮টি গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যাক্রান্ত লোকজন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। বন্যাক্রান্ত ইউনিয়নগুলো হলো সারিয়াকান্দি সদর, চন্দনবাইশা, কামালপুর, বোহাইল, হাটশেরপুর, কাজলা, চালুয়াবাড়ী, কুতুবপুর ও কর্ণিবাড়ী । বন্যার্তদের জন্য প্রচুর পরিমানে ত্রাণ রয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচী ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন বান্টু তরফদার জানান, চর গোদাগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এছাড়াও চর গোদাগাড়ী, বোদার ভিটা, ফকির পাড়া, কুপতলা উত্তর পাড়া গ্রামের নিম্মঞ্চল প্লাবিত হয়ে আমন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপর দিকে বাঙ্গালী নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজার, পাইকপাড়া, ছাগলধরা, পারদেবডাঙ্গা, মাছিরপাড়া, বাঁশহাটা, জোড়গাছা ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বের নদীর তীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন রোধে দু’এক স্থানে বাঁশের পাইলিং দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে বাড়ি ঘরের পানি ওঠায় যমুনা তীরবর্তী এলাকার মানুষরা স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার