মিয়ানমারে সেনা ও বিজিপি'র নির্যাতনের ফলে রাখাইন থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়েছে রোহিঙ্গারা। এপারে আসতে না পেরে নারী-শিশুসহ অসংখ্য রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে তাবু স্থাপন করে গত শুক্রবার থেকে অবস্থান করছে। সোমবার সকাল ১১টায় এপারে অবস্থানকারী প্রায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে বিজিবি পুশব্যাক করে। এসময় রোহিঙ্গাদের উপর চড়াও হয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশ বিজিপি।
দুপুর সাড়ে দেড়টার দিকে ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের বেশকিছু সেনা ভীতি সঞ্চার করতে মহড়া দেন। তাদের দেখে জিরো পয়েন্টে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে অন্তত ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ধেয়ে আসতে শুরু করে বাংলাদেশের দিকে। বিজিবি শত চেষ্টা করেও তাঁদের আটকাতে পারেনি। তবে পরবর্তীতে অতিরিক্ত বিজিবি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ধেঁয়ে আসা রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় জড়ো করে রাখে।
ওই সময় মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সীমান্তের এই পাড় থেকে আগুনের লেলিহান শিখা ও ব্যাপক পরিসরে ধোঁয়া দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর ফের হত্যাযজ্ঞ এবং জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে।
বিগত কয়েক দশক ধরেই রক্তাক্ত মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন (আরকান রাজ্য)। রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনি জান্তা সরকার। মাঝে মাঝেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে উগ্রপন্থী রাখাইনেরা চালায় হত্যাযজ্ঞ। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো মিয়ানমার সেনাদের এমনই এক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন গত বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কমিশন রোহিঙ্গাদের উপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানায়। প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন করে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার। এই সংঘর্ষে সোমবার সকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে ১২ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।
ঘুমধুম জলপাইতলি সীমান্তের কলাবাগান জিরো পয়েন্ট অবস্থানকারী রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া ফরিকপাড়ার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ (৪৩) জানান, সোমবার বিজিবি তাদেরকে সকাল ১১টায় মিয়ানমারে পুশব্যাক করেছিল। কিন্তু সেখানকার সেনা ও বিজিপি’র যৌথ মহড়া দেখতে পেয়ে পুনরায় বাংলাদেশে অভ্যন্তরে চলে আসেন।
মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া লেইড অর্থাৎ (ইউপি)’র চেয়ারম্যান আব্দু শুক্কুর (৫৩) বলেন, আমরা কোনদিন চিন্তা করিনি মিয়ানমার থেকে চলে আসতে হবে। আমি ৭ বছর ৮ মাস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু কপালে লিখা ছিল বিধায় আজকে সকালে সীমান্তের এপারে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরো বলেন, সকাল ৮টায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসি, আবার ১১টায় ফেরত দেয় বিজিবি। কিন্তু বিকেল ৩টায় আবার চলে আসতে হয়েছে এদেশে।
তুমব্রু বিজিবি’র সুবেদার হাকিম জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, শিশুদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ভীতিকর পরিস্থিতি কারণে আবার চলে এসেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে।
বিডি প্রতিদিন/২৮ আগস্ট ২০১৭/হিমেল