প্রযুক্তির প্রসার ও সময়ের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে কামার শিল্প। কাজের অভাবে কামার শিল্পীরা ধুকছে। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঝিনাইদহের কামার পল্লীতে দিন রাত ঠুং ঠাং শব্দ লেগেই আছে। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানানোর কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র তৈরিতে ১১ মাস অলসের পর এক মাস তারা নাওয়া-খাওয়া, ঘুম ভুলে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকার কারণে এখন অনেকেই নতুন কাজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, কয়লার আগুনে লাল টকটকে তেঁতে ওঠা লোহায় হাতুড়ি দিয়ে দু’দিক থেকে ইচ্ছা মত পেটাচ্ছেন তারা। লাল রঙ ফিকে হয়ে এলে পানিতে ভিজিয়ে আবারও পেটানো হচ্ছে। কেউ বা শান দিয়ে ধার দিচ্ছে ছুরি-চাপাতি। রেত দিয়ে কেউ আরও ধারালো করছে দা কিংবা চাপাতি। লোহা, কয়লা ও শ্রমের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুঁজির অভাবে বছরের অন্য সময় ব্যবসা ভাল করতে না পারলেও এই সময়টাতে বেচাকেনা ভাল হওয়ায় তারা ব্যস্ত রয়েছে পৈত্রিক পেশায়। সারা বছরের কর্মহীন ক্ষতি তারা পুষিয়ে নিতে চায় এই কয়েকদিনে। সে কারণে কামার পল্লীর কারিগরদের চোখে ঘুম নেই। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোনো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই তাদের। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের দা, ছুরি ও চাপাতি তৈরি এবং মেরামতের কাজ। ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার ৬৭ ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ কামার পরিবার কাটাচেছ প্রচন্ড ব্যস্ত সময়।
এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা সমস্যায় পড়েছেন। আগে ৫০-৬০ টাকায় এক বস্তা কাঠ কয়লা পাওয়া যেত। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-৮০ টাকায়।
কারিগররা জানান, এ পেশা বাপ-দাদার কাছ থেকে পাওয়া। তাই কষ্ট হলেও এ পেশা ধরে রাখতে হচ্ছে। গত বছর লোহার কেজি ছিল ৮০ টাকা। এ বছর তা কিনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কাজেই বাধ্য হয়ে আমাদের দাম বাড়াতে হচ্ছে। তবে লোহার দামটা একটু বেশি হলেও সবাই এসব সরঞ্জামাদি কিনছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার